দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও গত বছরের শেষদিকে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম নতুন বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন এবং কৌশলে টাকা-পয়সা দিয়ে পরের স্ত্রী মুক্তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ গত আট মাস আগে এ নিয়ে করিম ও শামসুন্নাহারের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।
তখন প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে একেবারে চলে গিয়ে পল্টনে আরেক স্ত্রী মুক্তাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন করিম। এরপর মাঝে মধ্যে প্রথম স্ত্রীর বাসায় এলেও তাদের মধ্যে ঝগড়াই হতো। ঝগড়ার মধ্যে বিভিন্ন সময় শামসুন্নাহারকে মেরে ফেলার হুমকিও দিতেন করিম।
বুধবার (০১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের নিজ বাসায় (বাসা নং- ৭৯/এ) শামসুন্নাহার করিম (৪৫) ও তার ছোট ছেলে শাওনকে (১৭) গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই আবদুল করিম, বাসার দারোয়ান আবদুল নোমান ও গৃহকর্মী রাশেদাকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) করিমের আরেক স্ত্রী মুক্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া জাকির জানান, তিনি ৬ বছর ধরে এ বাড়ির ৬ তলায় ভাড়া থাকেন। করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার গত বছরের শেষের দিকে তার স্বামীর পরের বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন এবং তাদেরকে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ আর করিমের পরের স্ত্রীর বাড়িও একই জেলায়। তাই টাকা-পয়সা দিয়ে সেই স্ত্রীকে করিমের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তবে ৮ মাস আগে এ বিষয়ে শামসুন্নাহারের সঙ্গে করিমের তুমুল ঝগড়া হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শামসুন্নাহার করিমের শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। তখন করিম বাড়ি থেকে বের হয়ে পল্টনে আরেক স্ত্রীর সঙ্গে অন্য বাসায় ওঠেন’।
বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কয়েকবার কাকরাইলের এ বাড়িতে এসে করিম প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, আবদুল করিম তিন বিয়ে করেছেন বলে জানা গেছে। নিহত শামসুন্নাহার করিম তার প্রথম স্ত্রী। এরপর তিনি আরেকটি বিয়ে করেন এবং চার বছর আগেই তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। পরে তিনি শারমিন আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাবিদ কামাল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তাকে আটক করা হয়েছে। তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকেও খোঁজা হচ্ছে।
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার সময় গৃহকর্তা আবদুল করিম বাসায় ছিলেন না। অন্য স্ত্রীদের নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি-না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে করিমকে হত্যার জন্য বাড়িতে এসে পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে কি-না- সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
এদিকে, আসামি শনাক্তে বুধবার রাতেই ওই বাড়ির প্রবেশ গলির সামনের একটি এবং কাকরাইল ও এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ডিএমপি'র যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাকরাইল এলাকায় করিমের তিনটি বাড়ি রয়েছে। পারিবারিক কলহসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
পিএম/এএসআর