গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশের এ নিয়োগ নিয়ে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন ও তদবির যাতে না হয় সে বিষয়ে আগে থেকে সর্বোচ্চ প্রচারণা চালায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল। ফলে এবারের নিয়োগে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত গড়েছেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাছাই পর্বে ১ হাজার ৭৪০ জন নারী-পুরুষ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ৭৬১ জন রিটেন পরীক্ষা দিয়ে ৪০২ জন উত্তীর্ণ হয়। মৌখিক যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্য থেকে ৭০ জন পুরুষ সাধারণ ক্যাটাগরিতে, একই ক্যাটাগরিতে ১৩ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুরুষ ৮ জন, উপজাতি কোটায় পুরুষ ৬ জন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় পুরুষ ৩ জন ও একজন নারীকে নির্বাচিত করা হয়। যাদের মেধা ও যোগ্যতা নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে বাছাই করা হয়।
জানা যায়, এবছর কনস্টেবল নিয়োগে আগে থেকে সতর্ক অবস্থানে ছিল জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালালের নির্দেশে দালাল ও তদবির টেকাতে জেলাব্যাপী চালানো হয় প্রচারণা। আর্থিক লেনদেন ও তদবির না করতে মাইকিং ও পোস্টারিং করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন পুলিশ সুপারের সরকারি মোবাইল ফোন বন্ধ ও তার কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছিল যাতে কেউ কোন তদবির করতে না পারে। ফলে তদবির ছাড়াই যোগ্যতার বিচারে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ সদস্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
কনস্টেবল নিয়োগে প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত একাধিক প্রার্থী জানান, আর্থিক কোনো লেনদেন ছাড়াই নিজ যোগ্যতায় তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সাধারণ নারী কোটায় ৮০ নং রোলের প্রার্থী ফারজানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমি সব পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি। শুধু তাই নয়, ভাইবা পরীক্ষায় আমি সবার মধ্যে ২য় স্থান অধিকার করি। বাছাই পর্বের প্রথমদিন পুলিশ সুপার স্যার আমাদের বলেছিলেন যোগ্যতা যার সেই চাকরি পাবে। সেই থেকে আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষা দেই। কোনো তদবির ও দালাল না ধরেই আমি নির্বাচিত হয়েছি।
নিয়োগ প্রার্থী সাধারণ পুরুষ কোটার ৫৪০ নং রোলের সুজিত দেব বাংলানিউজকে বলেন, আগে শুনেছি টাকা দিয়ে পুলিশে নিয়োগ নিতে হয় কিন্তু এবার পুলিশ সুপার স্যার বলেছিলেন টাকা ছাড়া যোগ্যতায় নিয়োগ হবে। ঠিক তাই হয়েছে, আমি টাকা ছাড়াই সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি কৃষকের ছেলে, বাবা কিডনি রোগী। টাকা দেয়ার ক্ষমতাই আমার ছিল না।
মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এসপি স্যার অত্যন্ত পরিশ্রম করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছেন। প্রত্যেক প্রার্থীর পরীক্ষার খাতা নিখুঁতভাবে যাচাই করে আমরা মার্কিং করেছি। ভাইবা পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখে তাদের প্রশ্ন করা হয় এবং যাচাই করা হয়েছে। এই কঠিন প্রক্রিয়ায় একমাত্র যোগ্য ও মেধাবীরা নির্বাচিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বাংলানিউজকে বলেন, এ নিয়োগে কোনো সাধারণ ও নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে চেষ্টা করেছি। কেউ কোনো দুর্নীতির সুযোগ পায়নি। আমার টার্মে চারবার পুলিশ নিয়োগ নিয়েছি। যার মধ্যে এটাই সর্বোত্তম নিয়োগ।
পুলিশের বড় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা বা দালালই হোক কারও তদবিরে কোনো কাজ হয়নি। সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাই পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮
আরএ