ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস ১৪ ডিসেম্বর

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস ১৪ ডিসেম্বর .

সিরাজগঞ্জ: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ শহর। এদিন সকাল ১০টার দিকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাদের প্রিয় শহরের দখল নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন। 

মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলীর আশপাশ থেকে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-জনতা জাতীয় পতাকা হাতে শহরে প্রবেশ করে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী।

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবসের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী দিবস একযোগে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছে।

মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল আজিজ সরকার, আশরাফল ইসলাম জগলু, কোরবান আলী বিন্দু বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদারমুক্ত করতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমেই সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করেন তারা। প্রচণ্ড যুদ্ধে ওইদিন শহীদ হন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ। সেদিন হানাদারদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরদিন ১০ ডিসেম্বর যুদ্ধে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্রাম নেন। . 

১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় আক্রমণ চালানো হয় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে। ১৩ ডিসেম্বর থেকেই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক থেকে, সোহরাব আলী ও লুৎফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক থেকে এবং আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে।

এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ওইদিন রাত ৩টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী ট্রেনে করে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়।

১৪ ডিসেম্বর ভোরে শহরের ওয়াপদা অফিসে হানাদার বাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে উড়িয়ে দেওয়া হয় লাল-সবুজের পতাকা। সম্পূর্ণরূপে পাক হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) এবং মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মরহুম আমির হোসেন ভুলুকে।

জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী সোহরাব আলী সরকার বাংলানিউজকে বলেন, একাত্তরে সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এক কাতারে সমবেত ও সংগঠিত করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম মরহুম আমির হোসেন ভুলু, তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) শহীদ শামসুদ্দিন, মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জা, মরহুম গাজী লুৎফর রহমান অরুণ, গাজী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গাজী জহুরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন শেখ, ইসমাইল হোসেন, ইসহাক আলী, আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, আব্দুল হাই তালুকদার, মরহুম এম এ রউফ পাতা, বিমল কুমার দাস, শফিকুল ইসলাম শফি, ফিরোজ ভূঁইয়া, মরহুম টিএম শামীম পান্না, মেজর মোজাফ্ফর, মরহুম মঞ্জুরুল হক তৌহিদ, আব্দুল বাছেদ খান, ফজলুল মতিন মুক্তা, সোহরাব আলী সরকার, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

আরেক সাবেক কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি বাংলানিউজকে বলেন, ৯-১১-১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চারদিনব্যাপী যুদ্ধ চলেছিল। এ যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব কালু, সুলতান মাহমুদসহ ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এর আগে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করেই নানা রকম নির্যাতন জুলুম ধর্ষণ অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে সমগ্র শহর। নিষ্ঠুর ও জঘন্য পৈশাচিকতা ছড়িয়ে পড়ে শহরতলীসহ গ্রামীণ জনপদেও।  

তিনি বলেন, ১৭ জুন’১৯৭১ সিরাজগঞ্জের বেসরকারি সাব সেক্টর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের নেতৃত্বে কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাটে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এর পর থেকে বাঘাবাড়ি, নওগাঁ, বরইতলী, বাগবাটি, ঘাটিনার ব্রিজ, ছোনগাছা, ভাটপিয়ারী, শৈলাবাড়ী, ব্রহ্মগাছা, ঝাঐলসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নিহত হয় সহস্রাধিক পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।