ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ

ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ করেছে নারী সংহতি। 

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেল চারটায় রাজধানীর শাহবাগে নুসরাতের ছবি হাতে ‘আমরা সবাই নুসরাত, নুসরাত হত্যার বিচার চাই’ স্লোগানে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নারী সংহতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখ্‌তারের সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা এমন একটা সমাজে আছি যেখানে নিজের ইচ্ছায় ভোট দিলে ধর্ষিত হতে হয়।

যেখানে শ্রমিক তার মজুরি দাবি করলে তাকে সুমনের মতো গুলি খেয়ে মরতে হয়। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দাঁড়ালে আগুনে ঝলসে প্রাণ দিতে হয়। এই সমাজে চাটুকার, দাস মনোবৃত্তির না হলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। এমন সমাজ ও রাজনীতির মধ্যেও আমরা নুসরাতসহ সারা দেশের নারীর নিরাপত্তা, মানুষ হিসেবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দাঁড়িয়েছি।

বক্তারা আরো বলেন, নুসরাতকে হারানোর বেদনা যেমন বোধ করছি একইসঙ্গে তার ওপর যে বর্বর অত্যাচার হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাই। নুসরাত হত্যায় যুক্ত সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন, কর্মী নুর উদ্দিন, নূর হোসেন এবং মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য রুহুল আমিন এবং সেখানকার কাউন্সিলর মকসুদ আলমসহ আরও অনেকে। এরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ও আশ্রয়ে এই নির্যাতকরা টিকে আছে। মুখে মুক্তিযুদ্ধেরে চেতনার কথা বলে ক্ষমতাসীনরা ধর্ষক, খুনি-নির্যাতক, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন মানুষ বেডরুম থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে, নির্যাতনের শিকার হন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার দাবি তুলেছে, নিরাপদ সড়কের দাবি তুলেছে একই সঙ্গে নিরাপদ বাংলাদেশের দাবি তুলেছে।   

বক্তারা বলেন, নুসরাত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছে। নুসরাতের পরিবার থানায় মামলা করে। নুসরাতের ওপর আগেও একবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। সে সময় তার বিচার হয়নি। থানার ওসিও নুসরাতের নিপীড়কের পক্ষ নেয়। নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সহযোগীরা হুমকি দেয়। হুমকিতেও যখন নুসরাতের মুখ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি তখন তার গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সোনাগাজীতে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটিয়েছেন।  

সংহতি বক্তব্যে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নুসরাতের মতো আরও যত নারী ধর্ষিত হচ্ছে, খুন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সেসবের কোনো বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কারখানার শ্রমিকেরা নিপীড়ক-নির্যাতক-ধর্ষকের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। ধর্ষক-নিপীড়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। কারণ প্রতিবাদ করা ছাড়া বেঁচে থাকার আর কোনো উপায় নাই। তা যদি না পারি তবে নুসরাতের মতো ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে।  

প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের শিরিন হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিল্পী কফিল আহমেদ, অরূপ রাহী, আলোকচিত্রী সাদিয়া রূপা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক পপি রানী সরকার, নারী সংহতির সদস্য রেক্সোনা পারভীন, মান্দাইল জেলার সংগঠক লিপি বেগম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৯
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।