ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পেট তো আর ঠাণ্ডা মানে না

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২০
পেট তো আর ঠাণ্ডা মানে না

লালমনিরহাট: কাম (কাজ) না করলে কেউ খাবার দেয় না ভাই। ঘুম ভাঙলেই পেটের দায়ে কামে বের হওয়া লাগে, না গেলে চুলায় যে আগুন জ্বলবে না। এইবার যে ঠাণ্ডা পড়ছে তাতেও ঘরে বসে থাকার উপয়া নাই। কারণ পেট তো আর ঠাণ্ডা মানে না। ঠাণ্ডা যেমনই পড়ুক বাইরে বের হতেই হয়।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজের কাছে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট থানাপাড়া এলাকার ভ্যানচালক হাকিম আলী (৪৫)।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়েছে হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাটে।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা আকাশে দিনভর সূর্যের দেখা নেই। বৃষ্টির মতো পড়া কুয়াশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। যার কারণে ঠাণ্ডায় প্রায় জুবুথুবু মানুষসহ গৃহপালিত পশু-পাখি। শীতের প্রকোপে নিদারুণ ভোগান্তিসহ কষ্টে পড়েছেন তিস্তা, ধরলার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষগুলো। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। সব থেকে বেশি কষ্টে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও শিশুদের জন্য নেই শীতবস্ত্র সোয়েটার। ফলে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে।  

গত সপ্তাহে রোদের দেখা মিললেও চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। শীত নিবারণে গরম কাপড়ের দোকানে বেড়েছে মানুষের ভিড়। তবে কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল গরিব ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। ঠাণ্ডার কারণে বাইরে কাজে বের হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে যথসামান্য গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে কাজে বেড়িয়ে পড়ছেন শ্রমজীবীরা।

লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়ে রিকশাচালক আক্কাস আলী (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, শীতের মধ্যে রিকশা চালালে বুকে ঠাণ্ডায় বাতাস লাগে। মনে হয় ঠাণ্ডা যেন হাড় ছিদ্র করে বুকে গিয়ে লাগছে। ছেড়া-ফাঁটা জ্যাকেট বা সোয়েটার গাঁয়ে দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। তার পরও পেটের টানে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়।

তিস্তা নদীর তীরবর্তী মহিষখোচা দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের রাহেমা বেগম (৬৫) বাংলানিউজকে বলেন, চার বছর আগে সরকারিভাবে পাওয়া একটা পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে রাত কাটাই, কিন্তু ঘুম ধরে না ঠাণ্ডায়। সরকারিভাবে কম্বল সাহায্য দিলে ভালো হয়।  

হিমেল হাওয়ায় ঠাণ্ডার প্রকোপ কয়েকগুণ বেড়েছে এ জনপদে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা অনেকটা কাঁপতে কাঁপতে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে ক্লাসে পাঠদানের শুরুতেই কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অনেক অভিভাবক ঠাণ্ডার কারণে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করেছেন। তবে এসব অভিভাবকের দাবি শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বলের পাশাপাশি সরকারিভাবে শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরণ করলে ভালো হয়।

এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে। এক্ষেত্রে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।  

সরকারি তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ২৬ জন ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনজন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় ১৩৮ জন ও নিউমোনিয়ায় ২২ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা হয়, সোমবার রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও লালমনিরহাটের সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন অফিসার আলী হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর শীতবস্ত্র হিসেবে ৪০ হাজার ৭০০ পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা উপজেলা ও পৌরসভায় বিভাজন করে বিতরণ করা হয়েছে। শিশুদের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। খুব দ্রুত শিশুদের সোয়েটার ক্রয় করা হবে এবং তা বিতরণও করা হবে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠাণ্ডা না লাগিয়ে সাধ্যমত গরম কাপড় পরিধান করে বের হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য সোয়েটার ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ এসেছে এবং তা ক্রয় করতে দরপত্রও দেওয়া হয়েছে। কেনা হয়ে গেলে শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।