ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়িতে সন্তান জন্ম দিলেন সাজাপ্রাপ্ত সায়মা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
বাড়িতে সন্তান জন্ম দিলেন সাজাপ্রাপ্ত সায়মা

রাজশাহী: রাজশাহীতে সায়মা (৩০) নামে এক সাজাপ্রাপ্ত নারী কারাগারের পরিবর্তে নিজ বাড়িতে থেকে সন্তান প্রসব করেছেন। এতে খুশি মামলার বাদী ও আসামি পক্ষ এবং স্থানীয় গ্রামবাসী।

মামলার অভিযোগকারী শিল্পী আসামির ছেলে সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করেছেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ছিল।  

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সায়মা সন্তান প্রসব করেন। এ খবর জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সবাই সায়মার সন্তানকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন। সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সায়মাকে একটি গাভী দেওয়া হয়েছে। এতে খুশি সায়মার পরিবার।

এর আগে গত বছরের ১২ নভেম্বর মারামারির একটি মামলায় সায়মাকে ও তার স্বামী জাকির হোসেনকে ব্যতিক্রমধর্মী সাজা দিয়েছিলেন রাজশাহীর একটি আদালত। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এ দম্পতিকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে এক বছরের জন্য প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।  

এ শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের স্থগিত হওয়া সাজা ভোগ করার জন্য কারাগারে যেতে হবে। এ দম্পতির বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট নারায়ণপুর গ্রামে।

মামলার প্রবেশনাধীন আসামি জাকির বলেন, আদালত থেকে সংশোধনের সুযোগ পেয়ে আদালতের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলেছেন। দুইজন প্রবেশন অফিসার সব সময় আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। এরইমধ্যে তারা উভয়পক্ষ আগের রাগ-ক্ষোভ ঝেড়ে মিলমিশ হয়ে গেয়েছেন।

মামলার এজাহারকারী ও ভিকটিম শিল্পী বেগম বলেন, ওরা ওদের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।  তিনিও ক্ষমা করে দিয়েছেন। নবজাতক শিশুটি তো নিষ্পাপ। তাই ওই শিশুটা কারাগারে চার দেয়ালের ভেতর না ভূমিষ্ঠ হয়ে বাড়িতে হওয়ায় তারা ও এলাকাবাসী খুবই খুশি।
এদিকে, আইনে নারী আসামি জন্য নারী প্রবেশন অফিসার নিযুক্তির বিধান থাকায় সায়মাকে সংশোধনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজশাহী সেফ হোমের উপ-পরিচালক (ডিডি) লাইজু সিদ্দিক।  

তিনি জানান, আসামিরা প্রবেশনে যাওয়ার পর নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করছে। প্রবেশনের এক বছরের মধ্যে পাঁচ মাসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা প্রবেশনের সুযোগ পেয়ে আপস-মীমাংসাও করে ফেলেছে। অবসান হয়েছে দীর্ঘ দিনের প্রবল শত্রুতার। আর এ নবজাতকটির জন্ম হওয়ায় আপসটি আরও সহজ হয়েছে।

আসামি জাকিরের প্রবেশন অফিসার মতিনুর রহমান জানান, যেহেতু আসামিরা প্রবেশনে থেকে সব শর্ত পূরণ করেছেন। উভয় পক্ষ আপসে সহাবস্থান করছে। সেহেতু তাদের পরবর্তী ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ভালো সুপারিশ করে বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিপোর্ট করবেন তিনি। তাদের সংশোধন করার পাশাপাশি পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাদের একটি গরুও কিনে দেওয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদ বাবু বলেন, ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’ অনুযায়ী এমন সুবিধা পাচ্ছেন তারা। আইনে প্রবেশন হচ্ছে কোনো আসামির প্রাপ্ত দণ্ড বা শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাসায় পারিবারিক পরিবেশে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া।

এমন ছোট খাটো অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামিরা নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর আপিল মামলা কমায় একদিকে মামলার জট কমছে, অন্যদিকে কারাগারে আসামির চাপও কমছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।