মাগুরা: কুষ্টিয়ায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আটক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়ের বাড়ি মাগুরার সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের আসবা গ্রামে। তিনি এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত।
তিনি বিয়ে করেন পাশ্ববর্তী জেলার শালিখা উপজেলার ধাওয়াসীমা গ্রামে। সৌমেনের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানতো না তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌমেনের বাবা সুনীল রায় মারা গেছেন অনেক বছর আগে। বাড়িতে মা ঝর্না রানি আছেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সৌমেন দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাই শান্ত রায় কৃষি কাজ করেন। দরিদ্র প্রান্তিক কৃষক পরিবার।
সৌমেন স্থানীয় বরইচারা অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পান। পরে পদোন্নতি পেয়ে উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) হন।
সৌমেনের ভাই শান্ত বাংলানিউজকে জানান, তার ভাইয়ের পাঠানো টাকায় তাদের সংসার চলতো। সৌমেন পারিবারিকভাবে ২০০৫ সালে জেলার শালিখা উপজেলার ধাওয়াসীমা গ্রামে কাশিনাথ বিশ্বাসের মেয়েকে বিয়ে করেন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি খুলনায় থাকেন।
সেই স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সৌমেনের বিয়ের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। তিনি বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি আমরা খবরে দেখেই প্রথম জেনেছি। এমনকি বিষয়টি সে তার স্ত্রীকেও জানায়নি। আমরা সবাই আজ প্রথম জানলাম। আমাদের ধারণা কুষ্টিয়ায় কর্মরত অবস্থায় হয়তো আসমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সৌমেন। অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সৌমেনের হাত ধরে তাদের দরিদ্র পরিবারটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
সরেজমিনে সৌমেনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনের একটি ছোটো ঘরে মা ঝর্নাকে নিয়ে শান্ত তার পরিবার নিয়ে বাস করেন। ঘরের দেয়ালে সৌমেনের একটা বড় ছবি টাঙানো রয়েছে। বাড়ি জুড়ে সুনসান নীরবতা। কেউ তেমন কথা বলতে চাননা। তারা ভেবেই পাচ্ছেন না কীভাবে এমন ঘটনা ঘটালেন সৌমেন।
সৌমেনের ইউনিয়ন কুচিয়ামোড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রতিবেশী শরুফ বর বাংরানিউজকে জানান, সৌমেনকে তারা শৈশব থেকেই চেনেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র বিনয়ী ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে। চাকরি পাওয়ার পর তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
সৌমেনের বাল্য বন্ধু প্রতিবেশী নারায়ন বর ও সুদর্শন বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, সৌমেনের সঙ্গে তারা প্রাইমারি ও হাইস্কুলে একসঙ্গে পড়েছেন। তিনি অন্য সহপাঠীদের তুলনায় শান্ত ছিলেন। চাকরি পাওয়ার পর সৌমেন তেমন বাড়ি আসতেন না। দুই বছর পর একবার বাড়ি এলেও কারো সঙ্গে তেমন মিশতেন না।
সৌমেনের নিজের ইউনিয়ন কুচিয়ামোড়ার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কুষ্টিয়ার ঘটনার পর সৌমেনের খোঁজ খবর নেন। তিনি বাড়িতে বেশি আসতেন না। এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
সৌমেনের শশুর কাশিনাথ বিশ্বাস বলেন, সৌমেনের পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন তিনি। সেই পরিবারে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া একটি মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। তার মেয়ের সঙ্গে সুখের সংসার ছিল সৌমেনের। তবে দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না তাদের।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের কাস্টমস মোড়ে গুলি করে স্ত্রী আসমা খাতুন, তার ছয় বছর বয়সী ছেলে রবিন ও শাকিল নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়।
এদিকে তিনজনকে গুলি করে হত্যার পর সৌমেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৌমেন বলেন, নিহত যুবক শাকিলের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। তাই তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন।
>>>কুষ্টিয়ায় ৩ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা
>>>কুষ্টিয়ার ৩ খুনের সঙ্গে পুলিশের ভাবমূর্তির সম্পর্ক নেই: অতিরিক্ত ডিআইজি
>>>শাকিলের সঙ্গে ‘পরকীয়ার’ জেরে মনোমালিন্য চলছিল আসমা-সৌমেনের
>>>ভয়ে পালাতে থাকা শিশুর মাথায় গুলি করেন এএসআই
>>>কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে মা-ছেলেসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
এনটি