ঢাকা, সোমবার, ৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১৩ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

কন্যাশিশুর সুরক্ষায় ৯ দফা সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
কন্যাশিশুর সুরক্ষায় ৯ দফা সুপারিশ

ঢাকা: দেশে কন্যাশিশুর সুরক্ষায় ৯ দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২১ পেশ করার সময় তারা এই দাবি জানায়।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ এবং প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ফারজানা খান এবং একশন এইড বাংলাদেশের চাইল্ড স্পন্সরশিপ ম্যানেজার মনিকা বিশ্বাস।

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সুপারিশগুলো হলো- শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সকল ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। করোনাকালীন বিচারিক আদালত যদি বন্ধ থাকে, ভার্চ্যুয়াল আদালতে এসব অপরাধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে; উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে; কারো হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ঘটনার শিকার নারী ও কন্যার পরিবর্তে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে এ ঘটনা ঘটায়নি, এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে; বর্তমানে মহামারিতে যেহেতু বেশিরভাগ শিশুই ডিভাইস নির্ভর। তাদের বিপদগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ এবং একইসাথে পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়া কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে; শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে; করোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে অভিভাবকরা নাবালক কন্যাদের বিয়ে দিচ্ছে, এর ফলে বাল্যবিবাহ বহুগুণে বেড়ে গেছে, সোশ্যাল সেফটিনেট-এর বাজেট বৃদ্ধি করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের তার আওতায় আনতে হবে; বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারী বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে; ক্রমবর্ধমান কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, পরিবার সকলেরঐক্যবদ্ধ হতে হবে; এবং কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতারোধে তরুণ-যুবসমাজকে সচেতনকরণ সাপেক্ষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত করতে হবে বলেও এ সময় সুপারিশ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমাদের কন্যাশিশু ও নারীরা পথে-ঘাটে, যানবাহনে, বাজারে, পাবলিক প্লেসে, এমনকি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাসা বাড়িতে হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। গত ৮ মাসে মোট ১১২ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন বিশেষ শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-এর তথ্য মোতাবেক গত ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল ১০৪ জন কন্যাশিশু। পরিসংখ্যান মোতাবেক গত বছরের তুলনায় এ বছরে যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। এই নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজ বাসায়, নিকটতম আত্মীয় পরিজন ও গৃহকর্তার দ্বারা। যৌন নির্যাতনে আর এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, তা হলো পর্নোগ্রাফি। এই সময়কালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ২১ কন্যাশিশু।

এসময় বক্তারা বলেন, একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুদের অধিকার, তাদের শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণসহ নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই, নির্যাতনের ক্ষেত্রে নির্যাতিত কন্যাশিশু বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও, সে তুলনায় অভিযুক্তদের আটক হওয়া, শাস্তি পাওয়া বা ন্যায়বিচার পাওয়ার সংখ্যা নাই বললেই চলে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য নির্যাতন ও সহিংসতা দিনদিন ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
এইচএমএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।