নরসিংদী: নরসিংদীর মনোহরদীতে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে মাজহারুল ইসলাম নামে এক শিক্ষককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে মনোহরদী উপজেলা পরিষদ টিকা কেন্দ্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএসএম কাসেম।
দণ্ডিত শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের ড্রেনেরঘাট এলাকার জে.আর.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষার সহকারী শিক্ষক।
জানা যায়, মনোহরদী উপজেলাতে গত ৮ জানুয়ারি শনিবার ১২-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের থেকে সুরক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ফাইজার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ২১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ফাইজার টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু টিকা কেন্দ্র লম্বা লাইন আর টিকা কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকাদান কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলেও বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের মাস্ক না পরা ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে টিকা কেন্দ্রে অবস্থান করতে লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থী কেন্দ্রে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করার কারণে তারা দ্রুত টিকা নেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা করছে। সবাই হুড়োহুড়ি করে আগে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কেন্দ্রে উপস্থিত স্কাউট ও আইনশৃঙ্খলার সদস্যরা ও তা নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মনোহরদী সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের করোনা সুরক্ষা ভ্যাকসিন কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করছিল। এসময় ভিড়ের মধ্যে জে.আর.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করছিলেন। এতে স্বেচ্ছাসেবী স্কুলছাত্রী পুলিশের শরনাপন্ন হয়। পরে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মোবাইল কোর্ট অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষককে ২০ হাজার টাকার জরিমানা করেন।
ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষার্থীর বড় ভাই বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছোট বোন ৫ দিন ধরে স্কাউটের হয়ে টিকাকেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। আজকে সে দায়িত্ব পালন করার সময় মাজহারুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক তার গায়ে হাত দেয়। পরে সে আমাদের জানালে আমরা মাজহারুল ইসলামকে আটক করে ইউএনও স্যারের কাছে হস্তান্তর করি।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ বাংলানিউকে বলেন, আজ টিকাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের প্রচুর ভিড় ছিল। মাজহারুল শিক্ষার্থীদের লাইন ঠিক করার দায়িত্বে ছিল। এসময় ভিড়ে ঠেলাঠেলির মধ্যে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার ধাক্কা লেগেছে শুনেছি। পরে শিক্ষার্থী ইউএনও স্যারকে অভিযোগ দিলে স্যার তাকে জরিমানা করে। আমি এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছি। আগামী সপ্তাহে ম্যানেজিং কমিটির সভায় এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.এস.এম কাসেম বলেন, স্কুলছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষককে জরিমানা করা হয়েছে। আর তাকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
এনটি