ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ঈদে বাড়বে দুর্ভোগ

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিষ্ট্রিক্টকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ঈদে বাড়বে দুর্ভোগ দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে ভেঙে যাওয়া ওয়েব্রিজ -বাংলানিউজ

রাজবাড়ী: রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট। এ ঘাটে ফেরির পাশাপাশি রয়েছে লঞ্চ পারাপরের ব্যবস্থা।

প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ লঞ্চে পদ্মা নদী পারাপার হন। যা ঈদের সময়ে বেড়ে যায় শতগুণ।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ব্যবহারেরর জন্য যাত্রীদের সুবিধার্থে কাঠ ও লোহার তৈরি আলাদা দুটি ওয়েব্রিজ (ওভারব্রিজ) রয়েছে। একটি যাত্রীদের লঞ্চঘাটে ওঠা ও একটি নামার জন্য ব্যবহার হতো। ব্রিজ দুটি যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল।

কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কবলে পড়ে ওয়েব্রিজ দুটির আংশিক পদ্মায় ভেঙে গিয়ে ব্যবহারের অনুযোগী হয়ে পড়ে। এরপর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়েব্রিজ দুটি বন্ধ রয়েছে। ভেঙে যাওয়ার প্রায় ৮ মাস হয়ে গেলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট পন্টুন ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রী বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

দীর্ঘ ৮ মাস পার হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত ঘাট ও সেতু দুটি। ফলে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগের তৈরি রাস্তা দিয়ে লঞ্চঘাটে আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে তাদের। এ সময় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়া মালামাল বহন করে ওঠা-নামায়ও বেগ পেতে হচ্ছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৭টি লঞ্চ চলাচল করেছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যাত্রী পারাপার করা হয়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফলে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা রয়েছে।   এ অবস্থায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ঘাট ও সেতু সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চঘাটের কাঠের সেতু দুটির প্রবেশ পথ বন্ধ এবং ঘাটের পন্টুন থেকে অনেক উঁচুতে। যার অবস্থা জরাজীর্ণ। যাত্রীরা সেতুর পরিবর্তে নিচ দিয়ে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ঘাটে ঢুকছেন। ঘরমুখো যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নেমে একইভাবে মাটির সিঁড়ি ব্যবহার করে উপরে উঠতে হচ্ছে। যারা মালামাল বহন করছেন তাদের উপরে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ঢাকা থেকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে আসা যাত্রী শহিদুল ইসলাম জানান, গত বর্ষায় নদী ভাঙনের কারণে লঞ্চঘাট ও তাদের যাতায়াতের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে তাদের ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে তৈরি করা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে। এ সময় ভারসাম্য হারিয়ে অনেকে আহত হবেন। তখনও যদি এ অবস্থা থাকে তাহলে যাত্রীদের খুব কষ্ট হবে।

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রী রহমত আলী জানান, এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। ঈদের তার সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঘাট ও যাতায়াতের পথ ভালো না থাকায় বহু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত লঞ্চঘাট ও যাতায়াতের সেতু দুটি সংস্কার প্রয়োজন।

দৌলতদিয়া ঘাটের লঞ্চ প্রতিনিধি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার দুই পাশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নদী পারাপার হচ্ছেন। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রীদের যাতায়াতের সেতু ভেঙে দীর্ঘ দিন অকেজো। এখন যাত্রীরা জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। প্রায় ছয় মাস আগে নদীভাঙনে লঞ্চঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সংস্কার করেনি। যাত্রীদের পাশাপাশি লঞ্চমালিক-শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এখন যাত্রীরা কোনো রকম চলাচল করলেও বর্ষায় অবস্থা খুব খারাপ হবে। ঈদে তো ঘরমুখো যাত্রীর চাপ বাড়বে কয়েকগুণ। তাই দ্রুত যথাযথ সংস্কার করা না হলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রী সঙ্কটে পড়বে এবং যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার স্থায়ী কাজ হবে। গত বর্ষায় নদীভাঙনে ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রীদের চলাচলের জন্য জিও ব্যাগ ফেলে রাস্তা করা হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীরা সেই রাস্তা ব্যবহার করছে। ঈদের সময় নদীর পানি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে কোনো একটি ফেরিঘাটকে লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আজিজুল হক খান মামুন জানান, যেহেতু আগামী ঈদে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করবে, বিষয়টি বেশ আগেই আমাদের নজরে এনে দুর্ভোগ কমানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে ওয়েব্রিজ দুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন করতে একাধিক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাগুলোতেও জনগুরুত্বপূর্ণ এ ওয়েব্রিজ দুটি সচল করার বিষয়টি তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, ১৭ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।