ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিরব মাঝিকান্দি ঘাট, জমজমাট পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
নিরব মাঝিকান্দি ঘাট, জমজমাট পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা

শরীয়তপুর: বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হয়েছে 'পদ্মা সেতু'। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের সেতু এখন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

এতে নিরব হয়ে গেছে একসময় সবর থাকা মাঝিকান্দি ঘাট।

শনিবার (২৫ জুন) সকালে স্বপ্নের এ সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টায় এটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন চলাচল করে। আর টোল আদায় হয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা। শুধু জাজিরা প্রান্তে আদায় হয় ৩৫ লাখ সাড়ে ২৯ হাজার টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন।

অন্যদিকে জাজিরার মাঝিকান্দিঘাট যেন একদমই নিরব হয়ে গেছে। ঘাটে চলেনি একটি ফেরীও। এমনকি রোববার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লঞ্চ চলেছে মাত্র তিনটি। তাতেও যাত্রীর দেখা মেলেনি তেমন। চলেনি কোনো ট্রলার। ৩-৪ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে গুটিকয়েক স্পিডবোর্ড। আর ঘাটের বেশিরভাগ দোকানেই তেমন দেখা মেলেনি ক্রেতা। সবদিকে ছিল সুনশান নিরবতা।

ঘাটের এমন চিত্রের কথা নিশ্চিত করেছেন, বিআইডব্লিউটিসিএ মাঝিকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন।

সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ শরীয়তপুর জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাট কিংবা মাদারীপুর শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরী পারাপার হতো। এছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতো। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার পরেই বদলে যায় ঘাটের সেই চিরচেনা রূপ।

জাজিরার মাঝিকান্দি থেকে মাওয়ার শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরী পারাপার হতো প্রায় তিন হাজার যানবাহন। এ রুটে পাঁচটি ফেরী ও ৩৩টি লঞ্চে পারাপার হতো যাত্রী-যানবাহন। এছাড়াও কয়েকশ ট্রলার ও স্পিডবোর্ড চলতো। কিন্তু এখন এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, নেমেছে সুনশান নিরবতা।

এখন মাঝিকান্দি সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘাটটি পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করা। এতে তাদের জীবন-জীবিকায় কোনো সমস্যা হবে।

খুলনা থেকে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আহমদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ফেরীতে চলাচল করতাম। অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন অনেক কম সময়ে ঢাকা পৌঁছাতে পারবো।

শরীযতপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এক বাসের যাত্রী বলেন, ফেরীঘাট, লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোর্ড ঘাট সবই ছিলো সিন্ডিকেটের দখলে। এ জন্য অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

মাঝিকান্দি লঞ্চঘাটের ইজারাদার প্রতিনিধি, ট্রলার চালক ও স্পিডবোর্ড চালকসহ কয়েকজন বলেন, এ ঘাট এখন শূণ্য হয়ে গেছে। রোববার সারাদিনে মাত্র দেড়-দুইশো যাত্রী এসেছেন। ঘাটটিকে পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করার দাবি জানাই। সেটি না হলে আমাদের এভাবে চলা কঠিন হয়ে যাবে।

বিআইডব্লিউটিসিএ মাঝিকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, রোববার সারাদিন তেমন কোনো যানবাহন পারাপার হতে আসেনি। একটিও ফেরী চলাচল করেনি। ফেরীগুলো সব শিমুলিয়া ঘাটে রয়েছে। অথচ আগে এ রুটে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যানবাহন পারাপার হতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।