লালমনিরহাট: প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ দাবিতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে বাংলানিউজকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বেলাল হোসেন।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবি প্রতিদিন দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন। গত ১৮ জুলাইও তিনি দেরিতে বিদ্যালয়ে আসায় একজন অভিভাবক দেরির কারণ জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবি ওই অভিভাবককে পায়ের জুতা দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে গত ১৯ জুলাই দুপুরে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন।
এ ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবির অপসারণ দাবি করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধ করে দেন অভিভাবকরা।
গত তিনদিন ধরে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এলেও কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। ফলে গত তিনদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান হচ্ছে না। বিষয়টি জানতে পেয়ে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) অভিভাবক সমাবেশ ডাকেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এলেও আসেননি কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী।
অবশেষে সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের আচরণ ও অভিভাবকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার লিখিত বক্তব্য নেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বেলাল হোসেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবি ক্ষমতার অপব্যবহার, অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো, দায়সাড়া দায়িত্ব পালন, সময়ের ব্যাপারে উদাসীনতা, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য উপকরণ সংকট, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের বিস্কুট বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসবের জন্য মানববন্ধন করেছি। কোনো কাজ হয়নি। তাই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষিকাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে তারা পাঠাবেন না।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েছি। অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে পাঠাবেন না।
হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না কোনো অভিভাবক। অভিভাবক সমাবেশেও কেউ আসেনি। তাই সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। অভিভাবককে প্রধান শিক্ষিকার জুতা পেটার সত্যতা স্বীকার করে সহকারী শিক্ষকরা লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পরেই তদন্ত করতে সহকারী শিক্ষা অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকরা যেহেতু প্রধান শিক্ষিকার আচরণে ক্ষুব্ধ তাই তাকে বদলি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২২
আরএ