ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

হাত নেই মানিকের, পায়ে লিখে দিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
হাত নেই মানিকের, পায়ে লিখে দিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা মানিক রহমান (১৬)। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও থেমে নেই তার পড়াশোনা।

দুই হাত না থাকলেও সে বসেছে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। ভরসা দুটি পা।

দুই হাত ছাড়াই জন্ম হয় মানিকের। পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছায় দুটি পা’কেই সে করেছে লেখনীর মাধ্যম। মানিকের পায়ের লেখাও সুন্দর।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এসএসসি পরীক্ষার শুরুর দিন ফুলবাড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে দিয়ে দেখা যায়, বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের উত্তর লিখছে মানিক। অত্যন্ত সাবলীলভাবে পরীক্ষার উত্তর লেখা শেষ করে সে।

জানা গেছে, পা দিয়ে লিখেই জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল মানিক রহমান।

মানিকের বাবার নাম মিজানুর রহমান। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের একজন র ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুই হাত না থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মানিক জয় করেছে পা দিয়ে। নিরলসভাবে পড়ালেখা চালিয়েছে; ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে সে। শুধু যে লেখার কাজেই মানিক তার পা দুটি ব্যবহার করে তা নয়। সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়ের মতো মোবাইল চালনা, কম্পিউটারে টাইপ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী সে।

২০১৬ সালে পিএসসি পরীক্ষায় জছিমিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছিল মানিক। চারবছর পর ফুলবাড়ি জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সে।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে মানিক বলে, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় সে। ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা তার।

মিজানুর রহমানের দুই ছেলের মধ্যে মানিক বড়। ছোট ছেলের নাম মাহীম, পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। মানিকের প্রতিবন্ধকতাকে এখন তারাও পাত্তা দেন না। পরিবারের গর্ব মানিক। তাই ছেলের জন্য বাবা সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার সাধ্যে যা আছে, তা করতেও রাজি মিজানুর।

ফুলবাড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) স্কুলের কেন্দ্র সচিব মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মানিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হওয়ায় তার জন্য চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাকে ২০ মিনিট বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। মানিকের পায়ের লেখা অত্যন্ত সুন্দর। সে যাতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আমি যে আশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২
এফইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।