ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লোকাল ট্রেনকেও হার মানায় যে আন্তঃনগর

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
লোকাল ট্রেনকেও হার মানায় যে আন্তঃনগর

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন ‘সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস’ কাজে আসছে না শহরবাসীর। সড়কপথে যানজট এড়াতে ট্রেনে যাতায়াতে তাদের পথে পথে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।

একাধিক স্টেশনে ক্রসিং বিরতি লোকাল ট্রেনকেও হার মানিয়েছে। সিরাজগঞ্জ-ঢাকা ২৩২ কিলোমটার পথ যেতে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। এছাড়াও পুরাতন জীর্ণ বগি দিয়ে আন্তঃনগর সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চলছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সম্প্রতি ট্রেনটিতে ভ্রমণ করা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে আর আন্তঃনগর ট্রেনের সেবা নেই। ট্রেনটি সিরাজগঞ্জবাসীর কোনো কাজেই আসছে না।
 
কাপড় ব্যবসায়ী শান্ত মির্জা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যাতায়াত করেন। প্রতিবারই নির্দিষ্ট সময়ের দুই তিন ঘণ্টা পরে গন্তব্যে পৌঁছান বলে জানান।

আরেক যাত্রী শাহজামাল বলেন, এই ট্রেনকে স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রেখে একাধিক ট্রেনের ক্রসিং করানো হয়। ফলে ট্রেনটিতে ভ্রমণে দিন দিন দুর্ভোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে সময়ের অপচয় হচ্ছে।

সাড়ে ১০টার মধ্যে ঢাকায় সরকারি একটি অফিসে পৌঁছানোর জন্য রওয়ানা হন তানজিম আহমেদ। কিন্তু ৫টি স্টেশনে দাঁড়িয়ে অন্য ট্রেনকে ক্রসিং করাতে যেয়ে সাড়ে দুপুর ১২টার দিকে কমলাপুর পৌঁছে ট্রেনটি। ফলে বাধ্য হয়ে একদিন অবস্থান করতে হয়েছে তাকে। এ ট্রেনটিতে আর কখনোই যাতায়াত করবে না বলে জানান তানজিম।  

মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য পরিবারসহ ট্রেনে উঠেছি। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য দূরের কথা, লোকাল ট্রেনের থেকেও সময় বেশি লাগছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রেনটির পাওয়ার কার ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমও। তিনি বলেন, এ পথে বেশির ভাগ ট্রেনের ক্রসিংয়ের জন্য সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

চালক শামছুল আলম বলেন, স্টেশনে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর জন্য আমাদের কিছু করার নেই। পাকশী কন্ট্রোলার এটা নিয়ন্ত্রণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময়ের রেলসিটি সিরাজগঞ্জ ধীরে ধীরে রেলশূন্য হয়ে পড়েছিল। রাজশাহীমুখী একটি লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কোনো ট্রেন ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৩ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে সরাসরি ঢাকায় যাতায়াতে আন্তঃনগর ট্রেন ‘সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস’ চালু হয়। ট্রেনটি সকাল ৬টায় ছেড়ে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। ফলে কর্মজীবীরা অফিস ধরতে পারতেন। আবার বিকেল ৫টায় অফিস শেষে ওই ট্রেনযোগেই ফিরতে পারতেন।

২০২০ সালে করোনা নিষেধাজ্ঞায় অন্যান্য ট্রেনের মতো সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসও বন্ধ হয়ে যায়। পরে সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগ চালু হলেও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু হয়নি। এ অবস্থায় শহরবাসীর আন্দোলনের মুখে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পুরাতন কিছু কোচ নিয়ে আবারও চালু হয় এ ট্রেনটি। কিন্তু যাত্রীসেবার মান নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ঢাকায় পৌঁছায় সাড়ে ১১টা-সাড়ে ১২টায়। অর্থাৎ আড়াই-তিন ঘণ্টার পথ পৌঁছাতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা লেগে যায়। একই অবস্থা হয় ফিরতি ট্রেনেও।

সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারি মাসুদ রানা বলেন, ট্রেনটির সাড়ে তিনশ আসনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ, রায়পুর, জামতৈল, শহীদ মনসুর আলী ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম এ ৫টি স্টেশনের জন্য বরাদ্দ ২শ আসন। বাকি আসন টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার জন্য বরাদ্দ। প্রায় আড়াই মাস আগে এই ট্রেনের একটি চেয়ার কোচ নষ্ট হয়ে গেছে। সেটি মেরামত করে আর দেওয়া হয়নি। সম্ভবত বগিটি অন্য কোনো ট্রেনে সংযোজন করা হয়েছে।

ট্রেনটির ব্যাপারে কারও গরজ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্টেশনে টিকিট ফুরিয়ে গেছে। টিকিটও দেওয়া হচ্ছে না। হাতে লিখে যাত্রীদের টিকিট দিতে হচ্ছে।

সদ্য অবসরে যাওয়া রায়পুর স্টেশন মাস্টার গোলাম হোসেন বলেন, বর্তমানে ট্রেনটিতে একটি পাওয়ার কার, একটি ইঞ্জিন ও ৬টি বগি রয়েছে। কোনো এসি কোচ নেই। শোভন চেয়ার ১টা, প্রথম শ্রেণি ১টা ও ৪টি সাধারণ বগি।

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বলেন, প্রথমে পুরাতন কোচ দিয়ে চালু হলেও পরবর্তীতে ট্রেনটিতে এসি কোচ, কেবিনসহ নতুন বগি সংযোজন করা হয়েছিল। করোনার পর ট্রেনটি পুরাতন কিছু কোচ দিয়ে চালু করলেও যাত্রীসেবায় সিরাজগঞ্জবাসীর সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় ট্রান্সপোর্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চল-ঢাকা রুটে প্রতিদিন প্রায় ৪২টি ট্রেন চলাচল করে। সিংগেল রুটে এত ট্রেন চলাচলের কারণে ক্রসিং হতে পারে। ডাবল লেন হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো: কুদরত-এ খোদা বলেন, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের একটি কোচ ড্যামেজ হয়েছিল। আমরা এটি মেরামত করে ট্রাফিক বিভাগকে দেই। তারা চাহিদা অনুযায়ী বগিটি সংযোজন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।