ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

গণতন্ত্রের মোড়কে কর্তৃত্ববাদের চর্চা করছে আ.লীগ: সাকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
গণতন্ত্রের মোড়কে কর্তৃত্ববাদের চর্চা করছে আ.লীগ: সাকি কথা বলছেন জোনায়েদ সাকি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদের চর্চা করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন মোড়ক আকারে থাকবে।

নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রার্থী বাছাই হবে, এমন কী টেলিভিশনে তা নিয়ে ডিবেট হবে। কিন্তু ভোটের দিন মানুষ নির্ধারণ করবে না যে কে নির্বাচিত হবে। বরং যারা ক্ষমতায় আছেন তারা নির্ধারণ করবেন যে কারা কার ক্ষমতা পাবেন, যা আওয়ামী লীগ ১৮ সালে করেছেন এবং এখন বাজারে কথা শুনতে পাই যে, তারা বলেছেন আসেন আপনারা আমরা সিট ভাগাভাগি করি। এটা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের মডেল।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন ১৪ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন জোরদার করুন’ শিরোনামে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের আয়োজিত সমাবেশ তিনি এ কথা বলেন।  

জোনায়েদ সাকি বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে কর্তৃত্বমূলক শাসনের যত ধরনের উদাহরণ আছে সবগুলো থেকে একটা একটা করে উপাদান ভাবনা তিনি (প্রধান মন্ত্রী) সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো এদেশে প্রয়োগ করেছেন। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ এগুলো কী আপনি মনে করেন আওয়ামী লীগের আবিষ্কার। এগুলো সব বিদেশিদের কাছ থেকে ধার করা। ভারতের নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও কিন্তু তিনি ডিজিটাল এবং স্মার্ট গুজরাটের কথা বলেছিলেন। এসব স্লোগান আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেছে।  

তিনি বলেন, জনগণ কী চায় সেটা তো কোনো বিষয় নয়, ক্ষমতাই আমাদের (আওয়ামী লীগ) জমিদারি। কিছু কিছু আওয়ামী লীগের পাতি নেতার ইদানিং বলেছেন স্বাধীনতা যেহেতু আমরাই এনেছি তাই লুটপাট করলে আমরাই করব আর উন্নয়ন করলে আমরাই করব। সবই আমরাই করব। এসব পাতি নেতাদের মাথায় এভাবেই আসে না। এমন চিন্তা অনেক বড় বড় নেতাদের মাথায়ও এসেছে। এমন কী সংবিধান প্রণয়নকারীদের মাথাও।

৭০ সালের গণপরিষদকেই ৭২ সালের গণপরিষদ হিসেবে ঘোষণা হয়েছে উল্লেখ করে সাকি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ৭১ সালের সাধারণ মানুষের যে রাজনৈতিক চেতনা তা অস্বীকার করা হয়েছে। ওইখানেই বাংলাদেশের গোড়ায় গলদ। বাংলাদেশ কীভাবে চলবে সেজন্য যদি জনগণের মতামত নেওয়া হতো তাহলে আরেকটা নতুন নির্বাচন করে গণপরিষদ গঠন করার দরকার ছিল। সব শ্রেণী-পেশা তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে গণপরিষদ গঠনের দরকার ছিল। সেটাও করা হয়নি।

তিনি বলেন, শুধু কী তাই, ওই গণপরিষদে যারা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ছিলেন তারাও স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেননি। গণপরিষদ বসার আগেই রাষ্ট্রপতির প্রেসিডেন্টশিয়াল অর্ডারে আজকে যেটা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সেটা ঘোষণা করা হলো। যে গণপরিষদে সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন না। আর তদের যদি কোনো মতামত থাকে তাহলে পার্টির ফোরামে বলতে হবে। সেখানে পার্টি যেসব সিদ্ধান্ত দেবে তাদেরকে কেবল হাত তুলে সমর্থন করতে হবে। দুনিয়ার কোনো দেশে গণপরিষদের এই অবস্থা হয় কিনা জানা নেই। কারণ গণপরিষদ তো সংবিধান তৈরি করে এবং সেখানে নানাভাবে মানুষের মতামত, চিন্তা এসব প্রতিফলনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেখানে তা করা হয়নি। বরং সংবিধান এমনভাবে করা হয়েছে যে এক ব্যক্তি সব ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং সারাজীবন যেন ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই রকম চিন্তাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। আর ৭২ সালে তারা সেই সংবিধানই তৈরি করেছেন। যেখানে সব ক্ষমতা তার হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। কাজেই ৭২ সালের সংবিধান হচ্ছে স্বৈরাচারী ক্ষমতা কাঠামোর সংবিধান।  

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদ রহমান মান্না।  এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদে সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
ইএসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।