সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের পাশাপাশি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী, সব অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোজাফফর আহমদের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের ছয় সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে অন্যতম সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে সফর করেন। সে সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন থেকে নিজস্ব উনিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত করতে অধ্যাপক আহমদের ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র মোজাফফর আহমদ দীর্ঘদিন বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। এর পর ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। মোজাফফর আহমদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৭ সালের দিকে। তিনি ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপনা ছেড়ে রাজনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক মোজাফফর নিজ জেলা কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপের প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক মোজাফফর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার ১৯৫৮ সালের দিকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে। তাকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়। আত্মগোপন থাকা অবস্থায় তিনি আইয়ুব সরকার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সুসংগঠিত করেন। দীর্ঘ আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কারাবরণ করেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিকভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লে ন্যাশনাল আওয়ামী লপাটি-ন্যাপও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তিনি সোভিয়েতপন্থি অর্থাৎ মস্কোপন্থি ন্যাপের নেতৃত্ব দেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালে অধ্যাপক মোজাফফর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির পক্ষে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে অধ্যাপক আহমদ কারাবন্দি হন। রাজনীতি জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ ইয়েমেন, লিবিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের নানান দেশে সফর করেন।
বাংলাদেশের সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এসকে/ওএইচ/