ন্যাপের প্রয়াত সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি এবং শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান।
তিনি বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ও অনেক সদস্য তাকে সমর্থন জানায়।
প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে নিয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) আরও অনেকেই বাংলানিউজের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে সারাদেশের মানুষ আজ শোকাহত। তিনি বাংলাদেশের গরিব মেহনতী মানুষের প্রতিটা লড়াই সংগ্রামে ছিলেন। বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে তিনি মিশে আছেন। তিনি সারাজীবন একটা আদর্শের রাজনীতি করে গেছেন। এ কারণেই তিনি স্বাধীনতা উত্তর মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এমনকি সর্বশেষ দেশের সর্বোচ্চ বেসমারিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক নিতেও অস্বীকৃতি জানান। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার বলেন, বাম রাজনীতির নিজস্ব একটি নীতি ও আদর্শ আছে। আমরা যদি সেই নীতি আদর্শকে আমাদের চলার পথ হিসেবে গ্রহণ করি, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সমাজতন্ত্রের যে অগ্নি মশালটি আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন, আমরা যদি সেই মশালটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি অধিকারহারা মানুষের জন্য সেটাই হবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
পাঠ্যসূচিতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফুরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আমাদের সবচেয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি সারাজীবন সাধারণ অধিকারহীন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। জাতির উচিত হবে তাকে স্মরণ রাখার ব্যবস্থা করা। আমি মনে করি, পাঠ্যপুস্তকে তার সংগ্রামের কথা তুলে ধরা। এটা যদি করা যায় তাহলে দেশেরই লাভ হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ত্যাগের রাজনীতির শেষ বাতিঘর ছিলেন। তিনি কোনদিন নিজের সুখ সমৃদ্ধের কথা ভাবেননি। তিনি সারাজীবন দেশের মানুষের জন্যেই কাজ করেছেন। আপসহীন রাজনীতির প্রতীক ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অবদানের কথা উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মোজাফফর আহমদ সবসময় সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ে শাসনতান্ত্রিক আয়োজন প্রতিষ্ঠা হয়নি বলেই তিনি প্রথম থেকেই আপসহীন ছিলেন সেদিক থেকে ইতিহাসে তার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। জাতির বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন সংগ্রামে তার যে ভূমিকা তা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। রোববার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।
দেশের সব থেকে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে আজীবন আপসহীনও সংগ্রামী এই নেতার মৃত্যুতে দেশ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
আরকেআর/এএটি