সিলেট: পাঁচদিন হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির। এর মধ্যে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে রাজপথে আগুন ছড়াচ্ছেন বিদ্রোহীরা।
বিতর্কিত এই কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ অনুমোদিত কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এতে জেলা ও মহানগরের উভয় ইউনিট থেকে ৬ জনকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে কেন্দ্রীয় পদ থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে নেন মুহিবুর রহমান মুহিব ও জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান।
ওইদিন ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা। সে সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে এক কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি ঘোষণার অভিযোগ তোলা হয়। সর্বশেষ শনিবার (১৬ অক্টোবর) নগরীতে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। তবে কি কারণে কেন্দ্রে সাত মাস কমিটি আটকে রাখা হলো এ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তবে আন্দোলনকারীরা রাজপথ কাঁপালেও তাদের দাবি যেন বাতাসেই ভাসছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনে পালন করছেন নীরব ভূমিকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার আগে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মতামত নেওয়া হতো। পরামর্শ চাওয়া হতো। এবার ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেসব না করেই। এ কারণে ছাত্রলীগ ইস্যুতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কিছু বলছেন না। কমিটি ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানান তিনি।
এদিকে বিতর্কিত কমিটি নিয়ে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নেত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।
টাকার বিনিময়ে অছাত্র ও অপরাধে জড়িত বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা সভাপতি এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারীদের শেল্টারদাতা। আর জেলার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে রাহেল সিরাজকে। তিনি যদিও বলছেন লিডিং ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। কিন্তু একটা ছেলে মেট্রিক পাস না করলে কিভাবে কলেজে ভর্তি হবে। একইভাবে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ দ্বৈত নাগরিক। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বিদেশে ছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক ঢাকায় বসে মনগড়া কমিটি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনেক নেতাদের এসব অজানা নয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ভূমিকার বিষয়ে শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, নেত্রীর কাছে অভিযোগ পাঠানোর বিষয়টি আমরা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পাস কাটিয়ে কমিটি দিয়েছে, সে জন্য তারা কিছু বলছেন না। তবে আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারের বা সংগঠনের যাতে দুর্নাম না হয় এবং সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে নবগঠিত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
আরও পড়ুন:
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
কোটি টাকায় সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি!
সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল দাবিতে মানববন্ধন
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২১
এনইউ/এনএসআর