ঢাকা: ‘সরকার পরিবর্তন’ এখন জনগণের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, এই দেশে সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি। আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই। তারা কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তারা আজকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, তারা আজকে মানুষের অধিকার ব্যাহত করে, তারা আজকে জনমানুষের জীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে। তাই বলবো, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা নতুন নির্বাচন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন যাতে সবাই ভোট দিতে পারে। ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। ’
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব অভিমুখে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করার কারণে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা একটা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে সরকার যে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে তার প্রতিবাদ জানাতে শান্তিপূর্ণ র্যালি করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাবো। আমরা চিঠিও দিয়েছিলাম আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে সকাল থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের এখানে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এখন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করছি। ’ ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মহাসচিব বলেন,‘ আমি ভাইদের বলতে চাই আপনারা অনেক কষ্ট করে, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি অনুরোধ করবো, এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যে যেখান থেকে এসেছেন চলে যাবেন। আমরা সম্প্রীতির স্বার্থে কোনো মিছিল বা র্যালি করছি না। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু, মুসলমানের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বাস করছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরে আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় এসে তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, তারা প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে, তারা নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করেছে এবং মিডিয়াকে তারা অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করে রাখতে চায়। ’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটু দয়া করে শান্ত থাকবেন। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর কোনো আঘাত আসলে অবশ্যই প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। আজকে সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে এই সরকারের মানুষদের নিরাপত্তা দিতে সেজন্য এর বিরুদ্ধে আমরা সমাবেশ করছি। আমরা পরিস্কার বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে একটি মুক্ত সমাজ, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যেখানে সম্প্রদায় সম্প্রদায় কোনো বিভেদ-বৈষম্য থাকবে না। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ’
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাবো না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করবো। সবাই আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে। সময় পাবেন অথবা সময় পাবেন না। আজকে যেমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার থেকে শতগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথে যে বাধা আসবে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আঘাত করলে আমরা নির্ভয়ে মাথা পেতে নেবো না- এই কথাটা পরিস্কারভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, এই কথাটা পরিস্কারভাবে সরকারকে বলতে চাই। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, দেশে শান্তি অবস্থা ফিরিয়ে আনুন। আর মন্দির হামলার সঙ্গে জড়িত সেই প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করুন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে যে মামলা দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করুন। যাদের গ্রেফতার করেছেন তাদের মুক্তি দিন। ’
বিএনপির প্র্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হায়দার আলী খান লেলিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, নিপুণ রায় চৌধুরী, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে একটি মিছিল নাইটিংগেল মোড়ের দিকে গেলে সেখানে পুলিশ টিয়ারসেল ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আরও পড়ুন: পুলিশের বাধায় বিএনপির সম্প্রীতি মিছিল পণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২১
এমএইচ/এনএসআর