ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

আফগানদের বিপক্ষেও শঙ্কার চোরাস্রোতে

অঘোর মন্ডল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৪
আফগানদের বিপক্ষেও শঙ্কার চোরাস্রোতে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মিসাইল, বারুদের গোলা, ড্রোন হামলা, আগুনের ধোঁয়া। এসব নিয়েই খবরের হেড লাইন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসেন আফগানরা।

গেল চার দশকে এটাই যেন সাধারণ আফগানদের নিয়তি! যদিও সেখানকার সাধারণ মানুষ আর খবরের হেড লাইন হতে চান না। আফগানিস্তান মানে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক জনপদ। স্মৃতির স্মরণি দিয়ে হাঁটলে রুশ সেনাদের বুটের আওয়াজ, তালেবান, মার্কিনিদের নেতৃত্বে বিমান হামলা ছাড়া আর কি খুঁজে পাওয়া যায় আফগান জনপদে!

স্মৃতির রাস্তাটাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগুতে চায় যে আফগনারা; তারা কিন্তু নিজেদের জন্য নতুন এক হাতিয়ার পেয়ে গেছে। যার নাম- ক্রিকেট। ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনপথ থেকে উঠে আসা এক দল লড়াকু ক্রিকেটার। যারা এখন খবরের হেডলাইনও হচ্ছেন। যেমন হয়েছিলেন এশিয়া কাপে; ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালির হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে! ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির আগে আফগানিস্তান নামটা তাই এদেশের মানুষের মনে শঙ্কার চোরা স্রোতে বইয়ে দিচ্ছে। আবার কোনো ‘অঘটন’ ঘটাবে নাতো ওরা!

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঘটন আর অঘটন আলাদা করা সত্যিই কঠিন! একশ কুড়ি, একশ কুড়ি- ২৪০ বলের খেলা। চায়ের কাপে বার দুয়েক চুমুক দিতে না দিতেই ম্যাচ শেষ! ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে কোনো দলের গায়ে ফেভারিটের তকমা এঁটে দেয়াও কঠিন। তবু বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে এগিয়ে বাংলাদেশ। সেটা জোর গলায় বলছি। ম্যাচ শেষে সেই গলাটা যদি মিন মিনে হয়ে যায়; তাহলে বলতে হবে; ‘ক্রিকেট ভাগ্য বিশ্বাসঘাতকতা করলে কারো কিছু করার থাকে না!’

কিন্তু তার আগে বলার অনেক কিছু আছে। বাংলাদেশ দলে মুশফিক-মাশরাফি-সাকিব-তামিম আছেন। যারা ব্যাট হাতে ঝড় তুললে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের জন্য যে ম্যাচটা প্রায় অলিখিত ফাইনাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে ম্যাচে আফগান বোলিং তছনছ করে দিতে কারো না কারো ব্যাটে ঝড় উঠতেই হবে। আর বল হাতে ওদের উইকেটগুলো টপাটপ তুলে নিতে হবে।

সাধারণ মানুষ এর বাইরে কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাখা ট্যাখা শুনতে চাইবে না। এটাও মুশফিকদের জানা।

কিন্তু বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার আশা-কে আফগানরা পিষে ফেলতে চাইবে। ওরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে। এশিয়া কাপে হারিয়েছিলাম, এই ভয় দিয়ে কাঁপাবেও বটে। কিন্তু তার আগে কাটিয়ে উঠতে হবে আফগান আতঙ্ক। ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কেমন যেন একটা নিম্মচাপ তৈরি হয়ে আছে। জিততেই হবে। প্রত্যাশার এই চাপ তৈরি হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের উপর।

শঙ্কাটা সেই জায়গায়। নিজের মাঠে খেলা। ষোলো কোটি মানুষের প্রত্যাশা। সব কিছু মিলিয়ে যে ক্রিকেটীয় নিম্মচাপ তা রোববার বাংলাদেশ দলের উপর আঘাত হানবে না, সেটাই প্রার্থনা।

এমনিতে এই টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশ শুরু করছে একটা দুঃখ নিয়ে। আগের চারটা ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ খেলেছে সরাসরি মূলপর্বে। এবার তাদের শুরু করতে হচ্ছে বাছাই পর্ব দিয়ে! তার উপর খেলাটা নিজেদের দেশে। তাই আফগানিস্তান নামক আইসিসি’র এক সহযোগী সদস্যের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অন্তহীন চাপ বাংলাদেশ দলের উপর! হারলেই শেষ হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি।

শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজে জয় বঞ্চিত থাকা বাংলাদেশের ভাগ্য ফেরেনি এশিয়া কাপেও। কিন্তু ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে নতুন এক বাংলাদেশের উদয় দেখতে চায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হার-কে প্রবলভাবে ঘৃণা করবেন। বিশ্বাস করবেন জয়ী-ই সব কিছু নিয়ে যায়, এই মানসিকতায়।

তাই জয়ের প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে আফগানদের উপর ঝাঁপানো ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা বাংলাদেশের জন্য খোলা নেই। জয় ছাড়া যদি অন্য কোনো শিরোনামে উঠে আসে বাংলাদেশের নামটা, তাহলে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’র মতো মেগা টুর্নামেন্টও এদেশের মানুষের জন্য রংহীন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যেতে পারে।

বাঙালীর আবেগ মুশফিকদের স্নায়ুর উপর অন্তহীন চাপ তৈরি করছে সেটা জেনেও লিখছি; আফগান মিসাইলে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের শবদেহ কেউ দেখতে চাইবে না। মুশফিকদের জন্য সেই কফিন বয়ে বেড়ানো হবে কষ্টের।

বাংলাদেশ সময় : ১৪১৪ ঘণ্টা, ১৫ মার্চ ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।