সেখানে একটি চেয়ার দেখতেই বসে পড়লেন মুমিনুল। বলতে গেলে এই টেস্টে সবচেয়ে বড় ধকলটা গেছে তার উপরেই।
এমন সময় দুটো হাত খুঁজে নিল তার হাত। তিনি রোশন আবিসিঙ্গে-শ্রীলংকান ধারাভাষ্যকার। ভিড়ের মধ্যে খুঁজে নিলেন মুমিনুলকে। শুরুতেই অভিনন্দন জানালেন রেকর্ডের জন্য। মুমিনুল কি রেকর্ড জানতেই রোশন বলে গেলেন সেই দুটো রেকর্ডের কথা।
পরপর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি, এক টেস্টে দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান-দুটো বড় রেকর্ডই হয়ে গেল মুমিনুলের নামের পাশে। হয়তো ম্যাচের ভেতরে তখনও ডুবে থাকা মুমিনুল জানতেনই না তার দুটো রেকর্ড যে হয়ে গেল।
প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের ধ্রুপদী ইনিংসে পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫। বাংলাদেশকে বাঁচাতে এর চেয়ে বেশি কিইবা করার ছিল লিটল মাস্টার মুমিনুল হকের। রেকর্ড দুই সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বাঁচিয়ে দেওয়ার পর আর ভাবতে হয়নি ম্যান অব দ্য ম্যাচ নিয়ে। সেটি অবিসম্ভাব্যভাবেই এলো মুমিনুলের হাতেই।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খুব বড় প্রশংসাপত্রই দিলেন মুমিনুলকে, ‘মুমিনুল মানুষ ছোট কিন্তু সবসময় কাজ বড় করে। এবং আমি একটা কথা বলতে চাই ওর বিষয়ে সেটি হলো ‘ওর হার্টটা অনেক বড়। হি ইজ এ বিগ হার্টেড ম্যান। ’
এই তাহলে মুমিনুলের ভালো খেলার পেছনের রেসিপি। এরপর মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘এজন্য আল্লাহর রহমতে খুব ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের জন্য পারফরম্যান্স করছে ও। আমি দোয়া করি সে যেন আরও বেশি ভালো পারফরম্যান্স করে। ’
পাশে বসা মুমিনুল তখন শান্ত-চুপচাপ। যেনো সাঁয় দিয়ে গেলেন অধিনায়কের কথাতে। এ তো গেল মুমিনুল নিয়ে কথা। মাহমুদউল্লাহকে বলতে হলো ক্যাপ্টেন হিসেবে কেমন অনুভূতি হলো সেটিও নিয়েও।
তার কথায়, ‘একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে অবশ্যই যেরকম পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম, ড্র পেয়েছি সেদিক থেকে মনে হয় যে এই টেস্টের পজিটিভ দিকগুলো আমরা নিতে পারবো। পরের ম্যাচে এগুলো কাজে দেবে। আমার মনে হয় যদি জিততে পারতাম অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু বোলারদের জন্য খুবই কঠিন সময় গেছে, আমরা দেখেছি, স্পিনাররা খুব কষ্ট করে বোলিং করেছে। তাদের বোলারও কষ্ট করেছে। উল্টো দিকে দুই দলের ব্যাটসম্যানরা শাসন করেছে। আমার কাছে মনে হয় আমাদের দিক থেকে ভালো ব্যাটিং অনুশীলন হয়েছে। ’
‘আর অধিনায়কত্ব অবশ্যই সম্মানের বিষয়। প্রতিটি ক্রিকেটারেরই ইচ্ছে থাকে অধিনায়কত্ব করার। ইচ্ছে ছিল ভালো কিছু করার। আমার ইচ্ছে থাকবে দ্বিতীয় ম্যাচেও এভাবে খেলার। তবে সাকিব ফিট হয়ে গেলে তো ইনশাআল্লাহ সে ফিরবেই। ’-যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ।
উইকেট এমন ব্যাটিংবান্ধব হবে আশা করেননি মাহমুদউল্লাহও। ম্যাচ শেষে উইকেট নিয়ে তার জবানবন্দি এমনই, ‘গতানুগতিকভাবে চট্টগ্রামের উইকেট প্রথম কয়েকদিন হয়তো স্পিন হয়, তারপর উইকেটটা ভালো হতে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় যে, প্রথম দিন থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত উইকেট ভালো ছিল। হয়তোবা এক দুটো বল এদিক ওদিক টার্ন হয়েছে। উইকেট ভালো ছিল। আমি অতটা আশা করিনি। ভেবেছিলাম প্রথমদিন স্পিন হয়নি, দ্বিতীয়-তৃতীয় দিন হবে। চতুর্থদিনও হতে পারে। পঞ্চমদিনও হতে পারে। স্পিন হয়েছে, তবে আহামরি সেরকম স্পিন হয়নি। ব্যাটসম্যানদের জন্য মোটামুটি উইকেট ছিল। তবে প্রতিটি ব্যাটসম্যানকে কষ্ট করে রান করতে হয়েছে। ’
জহুর আহমেদের উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কান ওপেনার করুনারত্নের দৃষ্টিতে ‘এটি টেস্টের জন্য আদর্শ উইকেট নয়’ এমন কথা বললেও বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এটি অবশ্যই টেস্টের জন্য আদর্শ উইকেট। দু’দলের ব্যাটসম্যানরাই এখানে ভালো করেছে। ’
পরবর্তী টেস্ট নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা মোটামুটি সবাই রান করেছে। দুর্ভাগ্যবশত মুশফিক ও লিটন সেঞ্চুরি মিস করেছে। তাদের সেঞ্চুরি প্রাপ্য ছিল। মুমিনুল তো অবশ্যই ভালো খেলেছে। তামিম দুটো ইনিংসেই ভালো করেছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। ভালো ব্যাটিং অনুশীলন হয়েছে। এই টেস্টের পজিটিভ দিকগুলো নেব আমরা। তবে বোলারদের আরেকটু ধৈর্য নিয়ে বল করতে হবে। ’
পরের টেস্টে কি হবে সেটি পরের কথা। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে বুক চিতিয়ে লড়ে ড্র। জন্মদিনে (৪ ফেব্রুয়ারি) এর চেয়ে বেশি কিইবা সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে পারতেন ৩২-এ পা রাখা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
টিএইচ/টিসি/এমআরএম