সজিব মিয়ার স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সদরে শহরের কোলাহলে বেড়ে ওঠা।
অফিসার্স ক্লাবের আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় তিনি ছিলেন নিভৃতে। এত এত মানুষের ভিড়ে সেটাই স্বাভাবিক। তবুও দিনটা সজিবের জন্য ছিল রোমাঞ্চের। প্রায় ছিটকে পড়া ক্যারিয়ারে নতুন আশার স্বীকৃতি পাওয়ার।
পুরস্কারের দীর্ঘ তালিকা শেষে আসে সজিবের নাম। মঞ্চে যান, পুরস্কার হিসেবে পান ব্যাট। তুলে দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আর হাবিবুল বাশার সুমন। মঞ্চ থেকে নেমে আসার পরই শুরু হয় সজিবের সঙ্গে গল্প।
চারদিকের শোরগোল ভেদ করে সজিব বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুরুর সেসব দিনের কথা। শোনান তার সাফল্য আর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চাওয়ার হতাশার গল্প। সজিবের চোখেমুখে তখন দুঃসহ স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানোর বিষণ্নতা আর সামনের দিনগুলো রাঙানোর প্রত্যয়।
দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে এবার খেলেছেন গাজী টায়ার ক্রিকেটার্সের হয়ে। ৪৩০ রানের সঙ্গে অফ স্পিনে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। তাতে সজিব পেয়েছেন সেরা অলরাউন্ডারের স্বীকৃতি। সিসিডিএমের অ্যাওয়ার্ড নাইটে পেয়েছেন সেই পুরস্কারই।
এতদিন ক্রিকেট খেলার পর ক্যারিয়ারে একটা গতিপথ পেলেন, কেমন লাগছে? সজিব এবার আর লুকাতে পারেন না মনের গহীনে লুকানো স্বপ্নটা, ‘ছোট থেকেই আসলে স্বপ্ন দেখে আসছি জাতীয় দলে খেলবো। সে লক্ষ্যেই ঘরোয়া ক্রিকেট বলেন বা অন্য যে কোনো জায়গায় একটা ভালো পারফরম্যান্স দরকার ছিল। এবার সেরকম কিছু করে অন্তত একটা ধাপে হয়তো পা রাখতে পেরেছি। বেশ পরিশ্রম করেছি, মাঝে তো করোনার কারণে দুই বছর খেলা হয়নি। এই বিরতিতেই কঠোর পরিশ্রম করেছি। ’
এই স্বপ্নও অবশ্য থেমে গিয়েছিল একটা সময়। সজীব প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বন্ধু আকবর আলীরা যখন বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন; সজিব তখন সুযোগ না পেয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার খুব কাছে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকা সেসব দিনের গল্পও শুনিয়েছেন সজিব।
বলেছেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ক্রিকেটটা প্রায় ছেড়েই দিচ্ছিলাম। যখন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যাম্প থেকে আমি বাদ পড়ে যাই। এরপর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ আর আসল না। ’
সজিবের সময়টা আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল কাছের মানুষরা দূরে সরে যাওয়ায়, ‘আমার পরিবার, কোচ ও এলাকায় যারা সমর্থন দিত তারাও হতাশ হয়ে গিয়েছিল ওই সময়টাতে। কাছের মানুষদের অনেকেই বাজে মন্তব্য করতো। ওই সময় মনে হচ্ছিল ক্রিকেটটা বোধ হয় আর চালিয়ে নিতে পারবো না। ’
‘তবুও মনে হয়েছে যে চেষ্টা করি যেহেতু এতদিন ক্রিকেটই খেলেছি। ক্রিকেটের জন্য পড়াশোনা ও কত কিছুই তো ত্যাগ করেছি, এবার না হয় আরেকটু সময়ই গেল। ২০১৮ থেকে ২০১৯ এই সময়টা খুবই বাজে গিয়েছে। ঐ সময়ে অনেকটা এমন হয়েছিল যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি ক্রিকেট খেলবো না। ’
শুরুর দিনের মতো এবারও সজিবের সঙ্গী হন বড় ভাই। ফেরান কক্ষপথে, নতুন করে জঁপে দেন লড়াইয়ের মন্ত্র, ‘এত মানুষের মন্তব্য, নিজের ওপর একটা মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছিল। ঐ সময়টায় আবার আমার নিজের আপন ভাই পাশে দাঁড়ায়। উনি আমাকে বলে তুই ক্রিকেট খেল, আর কিচ্ছু চিন্তা করিস না, ভাই আছি। ভাইয়ের ঐ অনুপ্রেরণা থেকে আসলে নিজেকে আবার নতুন করে ব্যাক করাই যে আমার আসলে বোধহয় কিছু করার আছে। এরপর ২০১৯-২০২০ মৌসুমে চেষ্টা, এই মৌসুমে ভালো পারফর্মও করলাম। এখন শুধু ইচ্ছে, কঠিন পরিশ্রম করে যাবো। ’
সজিব ব্যাটিংয়ে অনুসরণ করেন বিরাট কোহলিকে। দেশে তার প্রিয় সাকিব আল হাসান; হয়তো অন্য আট-দশটা অলরাউন্ডারের মতোই। তবে সজিব প্রত্যয়ী, তিনি হতে পারবেন বাকিদের চেয়ে আলাদা। এত এত কটু কথা শুনেও যিনি হাল ছাড়েননি, জাতীয় দল অবধি চলে যাওয়ার সংকল্পটা যার দৃঢ়; তার জন্য শুভকামনা তো জানানোই যায়!
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এমএইচবি/এআর