ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সহকর্মীকে ছাত্রলীগ নেতার লাঞ্ছনা, শিক্ষক নেতার পদত্যাগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
সহকর্মীকে ছাত্রলীগ নেতার লাঞ্ছনা, শিক্ষক নেতার পদত্যাগ 

চট্টগ্রাম: পরীক্ষার হলে এক ছাত্রকে নকল করতে নিষেধ করায় ছাত্রলীগ নেতার কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের এক শিক্ষক। পরে পিটিয়ে ওই শিক্ষককে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী নাঈম।

সহকর্মীকে এমন লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদ করেন চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দাশ। এ ঘটনার কোনও ধরনের সুরাহা না হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন তিনি।

কিন্তু পদত্যাগপত্রে পারিবারিক কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের কাছে লাঞ্ছিত এক সহকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর পর চাপের মুখে তিনি শিক্ষকনেতার ওই পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক  শিক্ষক।  

তারা বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষার হলে এক শিক্ষার্থীকে দেখে লিখতে বারণ করেন শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম। এতে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে কলেজ থেকে বদলি করার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় শিক্ষক নেতা হিসেবে তৎপর ছিলেন সুবীর দাশ।  

সুবীর দাশ সহকর্মীর লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিক্ষক পরিষদ থেকে পদত্যাগের মতো পরিস্থিতিতে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ সভা করলেও ছাত্রলীগের চাপেই তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলামকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার পর শিক্ষক নেতা হিসেবে সুবীর দাশ কাজী নাঈমের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় নাঈম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে যাব?’

পরে শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে গতকাল রোববার বিষয়টি নিয়ে সভা ডাকেন তিনি। সেখানে বিষয়টি মীমাংসা করানোর চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। তখন দ্বিমত করেন সুবীর দাশ। এরপর তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগের কথা জানান।  

সুবীর দাশ জানান, ‘মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি তার প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। এর সাথে পদত্যাগের সম্পর্ক নেই। আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। শিক্ষকদের সভায় মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা জানিয়েছি। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে এসেছি।

ছাত্রলীগ নেতা কাজী নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আপনি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সুবীর দাশ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষকের সঙ্গে যে ঘটনা সেটা মিটমাট হয়ে গেছে। ওই ছাত্র ক্ষমা চেয়েছে। শিক্ষকও ক্ষমা করে দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় সরকারি কমার্স কলেজের কেন্দ্র ছিল হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। পরীক্ষায় এক ছাত্র অপর এক ছাত্র থেকে দেখে লিখছিল। হলে দায়িত্বরত শিক্ষক ওই ছাত্রকে দেখে লিখতে নিষেধ করেন। এরপরও ওই ছাত্র দেখে দেখে লিখছিলেন। পরে ওই শিক্ষক আবারও সর্তক করেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্র খাতা জমা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমসহ বেশ কয়জনকে নিয়ে হাজির হন। এ সময় ওই ছাত্রকে লিখতে না দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকের কাছে জানতে চান কাজী নাঈম। এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই বলে জবাব দেন দায়িত্বরত শিক্ষক।

এরপর নাঈম কর্তব্যরত মুজাহিদুল ইসলামকে বলে, ‘আপনি লিখতে দেবেন কি–না?’ তখন ওই শিক্ষক বলেন, ‘পারবো না’। এরপর নাঈম বলে, ‘আপনাকে মেরে কলেজ থেকে ট্রান্সফার করবো’। এ সময় আরও কিছু অশালীন কথা বলে সে চলে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।