করোনা প্রাদুর্ভাবে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। যাদের আগে থেকেই হৃদরোগের উপসর্গ ছিল, চিকিৎসা নিচ্ছে বা নিয়ে সুস্থ আছেন এমন ব্যাক্তিদের ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহারে করে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবারের কারণে স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
তারা বলছেন, শিল্পোৎপাদিত বাজারের ডালডা বা বনস্পতি ঘি এ প্রচুর পরিমাণে ট্রান্সফ্যাট থাকে। এগুলো খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং অকাল মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, স্ন্যাক্স ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন এগুলো খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক কাজল কুমার কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এমন খাবার পরিহার করতে হবে। প্রচুর সবুজ শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম (শারীরিক পরিশ্রম) করতে হবে। এ সময় নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা যাবে না।
এদিকে ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া করোনা ভাইরাসে এ সেলফ কোয়ারেন্টিন এবং আইসলেশনে থাকার সময় শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ মোট ৩০টি দেশে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে।
এছাড়া আরো ২৪টি দেশ ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে। ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও বাংলাদেশ এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) দেশে প্রচলিত ফাস্টফুড, বেকারিপণ্য, স্ট্রিট ফুড কিংবা রেস্তোরাঁয় তৈরিকৃত ভাজা-পোড়া খাদ্যপণ্য তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেলের ব্যবহার কমাতে এবং ভোজ্যতেল বারবার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, হৃদরোগ, ক্যানসারসহ সব অসংক্রামক ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার একদম পরিহার করতে হবে। এখন বাইরের খাবার খাওয়া হয় না বলে বাড়িতে গরুর মাংস, ছাগলের মাংস নিয়মিত খেয়ে গেলেন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবারগুলোর মধ্যে বাড়িতে তৈরি বেগুনিসহ অন্যান্য খাবার খেলেন। তাহলে তো হলো না। ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার একমাত্র পথ হলো সচেতনতা। আর সচেতনতাই পারে আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে আনতে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছি। কাজ চলমান রয়েছে। দেশের এই সার্ভিক পরিস্থিতিতে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্টেকহোল্ডার, বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমারা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমেদের সিদ্ধান্তগুলো বিএসটিআইকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সিদ্ধান্তের আলোকে বিএসটিআই পরর্বতীতে পদক্ষেপ নিবে। আমাদের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২০
পিএস/এএটি