ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় অনাড়ম্বর আয়োজনে মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫
কলকাতায় অনাড়ম্বর আয়োজনে মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন 

কলকাতা: বাঙালি জাতির গর্বের এবং শ্রদ্ধার দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের স্মরণ করছে দুই পারের বাঙালি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।

তবে দিনটিতে এবার অনেকটাই তাল কেটেছে কলকাতায়। শহরে সবচেয়ে বড় পরিসরে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান দিনটি পালন করে থাকে, তারমধ্যে অন্যতম কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন।

এবার উপ-হাইকমিশনেও ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে কোনোরকম আড়ম্বর দেখা যায়নি। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে মিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এরপর শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মিশনের কর্মকর্তারা।  

কিন্তু কলকাতার ৩, সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রের সামনে থেকে প্রতি বছর যে সুদৃশ্য প্রভাতফেরি বের হয়ে থেকে, এবার তা ছিল না। খুব সংক্ষিপ্ত আকারে এই ভাষা দিবস পালন করেছে উপ-দূতাবাস।  

মিশন সূত্রে খবর, বর্তমান পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তাজনিত কারণেই এই অনুষ্ঠান কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে রদবদল ঘটানো হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলাদেশ ভবনেও। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি কেন্দ্রে উদ্‌যাপিত হয়েছে মাতৃভাষা দিবস। প্রভাত ফেরির পর সেখানে শহীদ বেদির সামনে সমবেত হন সকলে। বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন, বাংলাদেশ ভবনের সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিগ ঘোষসহ বাকি অধ্যাপকরা। অংশ নেন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও। তবে সন্ধ্যানুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবনের সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান বড় বিষয়। এটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এপার বা ওপার বাংলা বলে নয়, সকল ভাষাভাষী দিবস আজ। সংস্কারের কাজ চলার জন্য বাংলাদেশ ভবনে অনুষ্ঠান হয়নি। অন্যদিকে ভাষা দিবস উপলক্ষে, কলকাতার রবীন্দ্রসদন লাগোয়া রাণুছায়া মঞ্চে ৪৮ ঘণ্টারর অনুষ্ঠান করে থাকে শহরের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’। তারা এবার সেভাবে বিশাল আকারে করেনি। বৃহস্পতিবার সারা রাত অনুষ্ঠান করেছেন তারা। শুক্রবার সকালেই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।

এছাড়া রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম পাশেই রয়েছে কলকাতা করপোরেশনের তৈরি ভাষাশহীদ বেদি। সেটি একবারে ভিন্ন আদলে গড়া। মায়ের কোলে শুয়ে আছেন এক ভাষা শহীদ। মমতা ব্যানার্জির অনুরোধে মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন শিল্পী যোগেন চৌধুরী।  

এদিন সকালে সেখানে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল বিধায়ক দেবাশীষ কুমার দলের এমপি মালা রায় প্রমুখ।  
এ সময় মেয়র বলেন, বাঙালি জাতি লড়াই করতে জানে। এই দিনটিই তার প্রতীক। কেউ ইচ্ছা করলেই বাঙালির মাথা নত করতে পারবে না। বাংলা ভাষার জন্য বাংলাদেশের পাশাপাশি আসামের বহু যুবক প্রাণ দিয়েছেন।

এছাড়া দিনটি পালন করে থাকে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড। দু’দেশের আমন্ত্রণে দিনটিকে যৌথভাবে উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। এবারে তা হয়নি। উভয় দেশ আলাদাভাবে পালন করেছে। পেট্রাপোল সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান করেন। একইভাবে বেনাপোলেও সেভাবে পালন করা হয়েছে।

গত দুই বছর ধরে একটু অভিনব উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠান পালন করে আসছে কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব। অস্থায়ী শহীদবেদি নির্মাণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির করে আসছিল। কিন্তু এবারে তা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিকালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিধায়করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫
ভিএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।