ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়চুক্তির নেপথ্যে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৮, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়চুক্তির নেপথ্যে

ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৬টি রাফাল মেরিন যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। ফরাসি কোম্পানি ডাসোঁ এভিয়েশনের সঙ্গে এ চুক্তির মূল্য প্রায় ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তির সময় ও প্রেক্ষাপট থেকেই স্পষ্ট, চীন ও পাকিস্তানকে মাথায় রেখে এ পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি।

এমন এক সময়ে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যখন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা চরমে। পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় সামরিক কৌশলে সমুদ্র সীমায় আধিপত্য বজায় রাখাও ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব যুদ্ধবিমান ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং সেগুলো ব্যবহৃত হবে বিমানবাহী রণতরী ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ থেকে। এতে পুরনো যুদ্ধবিমান সরিয়ে আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করবে ভারত।

চুক্তি অনুযায়ী, ২৬টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ২২টি হবে সিঙ্গেল সিটার ও চারটি ডবল সিটার। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়েও চুক্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে ইতোমধ্যে ৩৬টি রাফাল রয়েছে। এবার নৌবাহিনীর জন্য ‘রাফাল-এম’ কেনার মাধ্যমে ভারত তাদের ‘থ্রি-ফোর্স সামরিক কাঠামো’ আরও শক্তিশালী করছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

অবসরপ্রাপ্ত ফাইটার পাইলট ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বক্সী বলেন, এই চুক্তি পাকিস্তান ও চীন—দুই দেশকেই বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ করে চীনের বাড়তে থাকা সামরিক প্রভাবের দিকে তাকিয়েই নৌবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা জরুরি ছিল।

তার মতে, সমুদ্রে আধিপত্য বজায় রাখতে বিমানবাহী রণতরী ও রাফাল যুদ্ধবিমানের সমন্বয় ভারতের জন্য বড় কৌশলগত সুবিধা তৈরি করবে।

সাউথ এশিয়ান পলিটিক্স অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের গবেষক উপমন্যু বসুর মতে, চুক্তিটির পেছনে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান নয়, বরং চীনই এখন ভারতের জন্য বড় হুমকি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সামরিক তৎপরতা ভারতকে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করছে।

তার ব্যাখ্যা, চীন যেমন চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে স্থিতিশীলতা চায়, তেমনি ভারতও চায় চীন যেন ওই অঞ্চলে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছে এক ধরনের যুদ্ধবিমান থাকলে পারস্পরিক সমন্বয় ও অপারেশনে সুবিধা হয়। এতে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমে আসে। সেই সঙ্গে ভারত-ফ্রান্সের পুরনো কৌশলগত সম্পর্ক এই চুক্তিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞ মনোজ যোশী বলেন, এই চুক্তি ভারতকে শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে সমুদ্র সীমায় ভারতীয় নৌবাহিনীকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।