ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ভোক্তার অধিকার রক্ষায় ক্যাব-ভোক্তা অধিকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
ভোক্তার অধিকার রক্ষায় ক্যাব-ভোক্তা অধিকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

ঢাকা: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং একটি আরেকটির পরিপূরক। দুই পক্ষই ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করে।

এই দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক যত শক্তিশালী হবে, ততই ভালো থাকবে দেশের সাধারণ মানুষ। তাই ভোক্তার অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দুই পক্ষকে সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) ক্যাবের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন ও ভোক্তা অধিকার শক্তিশালীকরণ বিষয়ক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন বক্তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অডিটোরিয়ামে এই সেমিনার ও প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যাব।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি গোলাম রহমান, মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। আলোচক ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেইন।

ক্যাবের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলামের উপস্থাপনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তাদের অধিকার আছে এই চিন্তা-চেতনা ১০-১৫ বছর আগেও দেশের খুব কম মানুষের মধ্যে ছিল। এখন গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র ভোক্তাদের মাঝে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। এছাড়া আইনও তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে যে কয়টি জনবান্ধব আইন আছে, তার মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ একটি। আগে ভোক্তা অধিকারের আইনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পরে সেগুলোকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে একত্রিত করা হয়েছে। তবে আইন থাকাই যথেষ্ট নয়, আইন থাকার পাশাপাশি যাতে প্রয়োগও হয় সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ক্যাবের সম্পর্ক নিবিড়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নানাভাবে ক্যাবকে সহযোগিতা করছে। ক্যাবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য সহায়তা করছে।

ক্যাব সভাপতি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে দৃশ্যমান চেষ্টা করছে। পণ্যের দাম যাতে ভোক্তার ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে এবং পণ্যে গুণগত মান যাতে ঠিক থাকে এ জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে সেগুলো প্রশংসনীয়। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এই কার্যক্রম আরও জোরদার হোক সেই প্রত্যাশা করি।

অর্থনৈতিক সংকটকে বর্তমান সময়ে ভোক্তার সবচেয়ে বড় সংকট  হিসেবে অবহিত করে তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, ব্যাংকে কোটি টাকা জমা আছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এই অবস্থা উত্তরণে ভোক্তার আয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে অনৈতিকভাবে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের মগজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে কীভাবে তারা বড়লোক হবে, কীভাবে মানুষকে ঠকাবে? দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে, ভেজাল ও প্রতারণা নেই। এই জায়গায় সবচেয়ে অসহায় হলো ক্রেতা। ঘুম থেকে ওঠার পর ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত, এমনকি ঘুমের মধ্যেও ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। এই বিপর্যয় থেকে আমাদের আস্তে আস্তে বের হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্যাব এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একটি অন্যটির পরিপূরক। দুই পক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি ভোক্তার অধিকার ততক্ষণ সরকারিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ এতে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করা না যাবে। আর এই জনসম্পৃক্ততার সবচেয়ে বড় সংগঠন ও হাত হলো ক্যাব।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন তদারকি কার্যক্রমে যাই, তখন আমরা নিজেরাও দ্বিধায় পড়ে যাই, কোনটা আসল, আর কোনটা নকল- বোঝার কোনো উপায় নেই। ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার মানদণ্ডে সোচ্চার হতে তাগাদা দিতে হবে। তাদেরকে আস্তে আস্তে উজ্জ্বীবিত করতে হবে। কারণ ভোক্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তারা।

তিনি বলেন, ক্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভোক্তার অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার আছে৷ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে ক্যাবের সমন্বয় যত শক্তিশালী হবে, দেশের মানুষ ও ভোক্তারা তত ভালো থাকবে। আমাদের দেশে এখনো ভোক্তার অধিকার নিয়ে অনাচার চলছে। খাবারের মধ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।