পাবলিক পরীক্ষায় অতিরঞ্জিত ফল প্রকাশ না করার নীতি গ্রহণের পাশাপাশি বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
রোববার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা লাইফ স্কিল, ভাষা শিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি জানান, নির্ভুল ও মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ, শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কার্যকর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরঞ্জিত ফল প্রকাশ না করার নীতি গ্রহণের পাশাপাশি বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান। অনলাইন বদলি, ই-ফাইলিং, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও এডুটেকের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। উচ্চশিক্ষায় অ্যাক্সেস টু গ্লোবাল নলেজ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যানবেইজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এনটিআরসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি শিক্ষকদের পদোন্নতি, মর্যাদা বৃদ্ধি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রণোদনার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও অনিয়ম দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বর্তমানে কারিগরি সচিবের নেতৃত্বে চলমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা (১৩তম গ্রেড)। তাদের বেতন গ্রেড কম্পিউটার অপারেটরের স্কেলের সমান। আর উপজেলা হেড কোয়ার্টারে একজন হিসাব রক্ষকের বেতন গ্রেড ১২তম। তাকে স্যার ডাকার মতো অবস্থা। সরকারি কলেজের অধ্যাপকের স্কেল একজন যুগ্ম সচিবেরও নিচে। অধ্যাপকের স্কেল চার। এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষকদের অবস্থা। তাদের মর্যাদা দিতে হবে। ট্রেডেশনালি শিক্ষকরা বিত্তবান ছিলেন না, কিন্তু মর্যাদাবান ছিলেন। বেতনের বৈষম্য চিত্র তুলে ধরে শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় শুধু কথা না বাস্তবিক অর্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমি মনে করি আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মতো হওয়া উচিত। এতে শিক্ষকতা পেশায় আকর্ষণবোধ করবেন। মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব রেহানা পারভীন।
এমআইএইচ/এমজে