ফরিদপুর: অবশেষে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বৃদ্ধ দম্পতির পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে বাড়িঘর ভাঙচুর করার অভিযোগে মামলা হয়েছে ময়না ইউনিয়নের প্রভাবশালী এক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর মামলার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এ ঘটনা নিয়ে ‘বৃদ্ধ দম্পতির বসতভিটা গুড়িয়ে দখলের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। এর পরপরই পুলিশ প্রশাসনের ঘটনাটি নজরে আসে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী পরিবারটির ওপর হামলা করার দুইদিন পর উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ (১ নম্বর আসমি) ও ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসানসহ (২ নম্বর আসামি) ২৮ জনের নামে মামলা হয়। এ মামলায় আরও ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ওই ইউনিয়নের বর্নিচর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধ হাফিজুর রহমান (৬৮) বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনজন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে পরিবারটিকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ময়না ইউনিয়নের বর্নিচর গ্রামের হাফিজুর রহমান, স্ত্রী মমতাজ বেগমকে (৬২) উচ্ছেদের জন্য ময়না মৌজার এসএ ২৩৮ ও ২৬২৬ নম্বর খতিয়ানের ৮৪, ৫২ দাগের ওপর নির্মিত বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন লাঠিসোঁঠা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। হামলায় ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ ও ময়না ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় ওই দম্পতির বসত ঘর ভাঙচুর, আধাপাকা ঘরের টিন, বেড়া ও ইট খুলে গাড়িতে নিয়ে যায় আসামিরা। এ ঘটনার দুইদিন পর ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ (১ নম্বর আসমি) ও ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসানসহ (২ নম্বর আসামি) ২৮ জনের নামে মামলা হয়। এ মামলায় আরও ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। গত ১২ জানুয়ারি দিনগত রাতে ওই ইউনিয়নের বর্নিচর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধ হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা নম্বর ৮।
১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭ নম্বর আসামি সেলিম শেখ, ২২ নম্বর আসামি সাহেব আলী ও ২৩ নম্বর আসামি লিটনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী বৃদ্ধ হাফিজুর রহমান বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে ওই জমি আমাদের ভোগ দখলে। ৬ মাস আগে ঘর তুলে আমরা বসবাস শুরু করি। আমাদের ১১ শতাংশ জমির মধ্যে গত বিএস রেকর্ডে মোতালেব শরীফের ছেলে অহম ও তহম শরীফ রেকর্ড করে নেয়। রেকর্ড শর্তে এ জমি সাড়ে পাঁচ শতাংশ বানিয়াড়ী গ্রামের সাহেব আলী ও সাড়ে ৫ শতাংশ ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল ইসলামের কাছে অহম ও তহম বিক্রয় করে দেয়। এর বিরুদ্ধে ফরিদপুর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা চলমান। তবে সে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে জোর করে হাসিবুল ও আলাউদ্দীন মেম্বার তার লোকজন নিয়ে ঢাল সড়কি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি সকালে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে আমাদের উচ্ছেদ করে।
মামলার ২ নম্বর আসামি ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ওই জমিটা আমার দুই চাচার। এ নিয়ে আদালত মামলার রায় অনুযায়ী ঢোলডগর বাঁজিয়ে লাল নিশানা গেড়ে দেয়। তাদের কাছ থেকে আমার কিছু জমি কেনা আছে। কিন্তু হাফিজুর মোল্যাগং আইন না মেনে জমিটি জবরদখল করে কিছুদিন আগে কয়েকখান ইট দিয়ে ছাপড়া দেয়। চাচা ও আমার জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। হাফিজার মোল্যা অযথা আমাদের সম্মানহানি করার জন্য মামলা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক উত্তম কৃমার সেন জানান, ঘর ভাঙ্গার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার পরপরই দুইজন ও শনিবার একজনসহ মোট তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
>> বৃদ্ধ দম্পতির বসতভিটা গুড়িয়ে দখলের অভিযোগ
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এসআরএস