রংপুর: কয়েক মাস আগেও তিস্তা নদী পারাপারে ভরসা ছিল নৌকা। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে হাঁটু পানি।
বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে মানুষজন পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন নদী।
উলিপুর থেকে পায়ে হেঁটে নদী পার হয়ে পীরগাছা উপজেলার শিবদেব চর গ্রামে আসা মজিরন বেগম বলেন, ‘হামার বাপের বাড়ি শিবদেব চরে। আগত নৌকাত করি যাওয়া আইসা করছি। এখন নদীত পানি নাই, সেইজন্যে হাঁটি পার হইনো নদী। ’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের কারণে নদীটির বাংলাদেশ অংশে প্রায়ই পানি সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া খনন কাজ না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। এ নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে দুই কূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে প্রায় শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ অঞ্চলের কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অথচ প্রতিবছর বর্ষায় একতরফাভাবে ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসংখ্য মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়। একইসঙ্গে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ফলে দুই পাড়ের মানুষজনকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ চরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা সামান্য খালের মধ্যে হাঁটু পানি পার হলেই এখন তিস্তা নদী পাড়ি দেওয়া সম্ভব।
তিস্তার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব আফছার আলী নামে এক কৃষক বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে গেইছে। তিস্তা হামার জন্য অভিশাপ। ভাঙন থামাতে সরকার কিছুই করতেছে না। ’
গাবুড়া এলাকার মৎস্যজীবী আতোয়ার রহমান ও আব্দুল জলিল জানান, তিস্তা নদীতে মাছ ধরে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু নাব্যতা কমে যাওয়ায় মৎস্য শিকার প্রায় বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। অনেকে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় গিয়ে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তিস্তা নদীর তীরের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, প্রতি বছর খরস্রোত তিস্তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যাসহ নদী ভাঙন দেখা দেয়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
এসএএইচ