ঢাকা: কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ির পথে ছুটছে নগরবাসী।
তারা বলছেন, এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছেন যাত্রীরা। ভোগান্তি ছাড়াই নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারছেন তারা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই সদরঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় কমে গেছে।
তা ছাড়া নির্দিষ্ট সূচি ও নিয়ম মেনেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
রোববার সদরঘাটে গিয়ে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছেড়ে যেতে চাওয়াদের দেখা যায়। বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের পদচারণায় ও লঞ্চ স্টাফদের হাঁক ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে। স্বাভাবিকের সময়ের তুলনায় পন্টুনে যাত্রীদের চলাফেরা বাড়লেও অন্যান্য বছর যে পরিমাণ ভিড় লক্ষ্য করা যেত, এবার তেমনটি নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে লঞ্চগুলোও বেশি বেশি যাত্রী পরিবহন করছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সকালের তুলনায় বিকেলে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও গতবছরের তুলনায় কম। এ সময়ে পন্টুনে পা ফেলার জায়গা থাকার কথা না। সেখানে টার্মিনালের অনেক স্থানই ফাঁকা। অনেক লঞ্চ খালি পড়ে আছে।
সদরঘাট যেতে আগে গুলিস্তান, রায়সাহেব বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় তীব্র যানজট মোকাবিলা করতে হতো যাত্রীদের। এবার তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না যাত্রীদের। এ ক্ষেত্রে মেট্রোরেল সুবিধা দিচ্ছে অনেকটাই। ছুটি বেশি হওয়ার কারণে একসঙ্গে হাজারো মানুষ বাড়ির পথে যাত্রা না করায় এলাকাগুলোও অনেকটা ফাঁকা দেখা গেছে।
সদরঘাটে নোঙর করা ছিল ঢাকা-বেতুয়া (চরফ্যাশন) রুটের লঞ্চ এমভি ফারহান-৬ বিকেল চারটার মধ্যে পুরো লঞ্চ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। লঞ্চের যাত্রী ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, যানজট হবে চিন্তা করে আগেই ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। রাস্তায় তেমন জট নেই। দুপুরের মধ্যেই সদরঘাট পৌঁছে লঞ্চে চড়েছি। ঈদের ভিড় এড়াতে অতিরিক্ত ছুটি নিয়ে আগেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি।
এ লঞ্চের কেরানি মো. সোহেল বলেন, যাত্রীদের জাপ কম। পুরো ডেকে মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে লঞ্চ ভড়ে গেছে। তা নয়, আরও অন্তত ২০০ যাত্রী তোলা যাবে। ৭৩টি কেবিনের মধ্যে বুকিং হয়েছে মাত্র ২৫টি।
এমভি রাজারহাট সি লঞ্চের কেবিন ইনচার্জ মো. হৃদয় জানান, তাদের লঞ্চ ঈদের যাত্রী পরিবহনের জন্য কলকাতা রুট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা টু বরগুনা রুটের এ লঞ্চে যাত্রীদের চাপ নেই।
ভোলার যাত্রী রুবেল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মতো এতো সুন্দর ঈদ যাত্রা আমি কখনো করিনি। সড়কে কোনো যানজট ছিল না। লঞ্চেও তেমন ভিড় নেই। এই গরমের মধ্যে শান্তিতে যাত্রা করতে পারব ভেবেই খুশি লাগছে।
সদরঘাটে নোঙর করা এমভি টিপু -১৩, এমভি তাসরিফ-৩ সহ আরও অনেক লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিন্ন ভিন্ন সময় জলযানগুলো ছাড়বেন তারা। অপেক্ষা শুধু যাত্রীদের। কেননা, আগে যে পরিমাণ কেবিন বুকিং হতো তা এবার নেমেছে অর্ধেকের নিচে। কেউ কেউ আবার ফাঁকা লঞ্চ নিয়ে যাত্রা করতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
রোববার সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঈদ যাত্রা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, এবার ঈদে রাজধানীর মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারবে। এজন্য সব নৌ-পুলিশসহ স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাই মিলে একযোগে কাজ করা হচ্ছে।
আইজিপি বলেন, আশা করছি সকল নাগরিকের ঈদ যাত্রা সুন্দরভাবে সুখদায়ক করতে পারবো। আমাদের সবাই মাঠে নেমে কাজ করছি। এই উৎসবকে আনন্দদায়ক করতে নিরাপদ করতে কাজ করছি৷ আমাদের ছুটি ত্যাগ করে নাগরিকদের সেবায় নিয়োজিত আছি, যাতে সকলে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারেন। আশা করছি, সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারবেন।
ঈদে ডাকাতি, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে নৌ-পুলিশ টহলে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রাপথেও নৌ-পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একই সাথে ঈদের আগে ও পরে (৯ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল) ব্লাকহেড ও স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন।
বাংলাদেশ নৌ-পুলিশ ও অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র্যাব, আনসার, নৌ-পুলিশ ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
লঞ্চ টার্মিনালে ট্রাফিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের অফিস থেকে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশে ৪৫টি নৌ-রুটে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৪৬টি, ঢাকায় এসেছে ৫২টি। রাতে সব মিলিয়ে ৯০টির মতো লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যাবে। গতকাল পর্যন্ত ৮০ থেকে ৮৬ টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করতো।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৪
জিসিজি/এমজে