ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর আগ্রাসী ভাঙনে মাত্র ২০ মিনিটে তিন একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বিশেষ আবাসন প্রকল্প স্বপ্ননগর এলাকা।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর এলাকায় সকালের দিকে মধুমতি নদীর এই ভাঙন রুদ্ররূপ ধারণ করে। এতে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে বিলীন হয়ে যায় কমপক্ষে তিন একর ফসলি জমি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাতলাসুর এলাকায় অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সেই কৃষি জমি এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে ধান, পাট ও ভুট্টা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এলাকার কৃষকরা। একমাত্র আয়ের উৎস ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা এখানকার কৃষকরা।
এদিকে এই ভাঙনের মাত্র ৩০০ মিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বিশেষ আবাসন প্রকল্প স্বপ্ননগর এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৫৩ একর জমির ওপর নগরের সব সুবিধা নিয়ে ‘স্বপ্ননগর’ নামে আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়। যাদের জমি নেই, ঘর নেই; এমন ২৮৬ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাট, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন।
এছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। চার বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানোর আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। স্বপ্ননগর আবাসন এলাকা ছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আশপাশের কয়েক শতাধিক পরিবার, মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা।
বাপ-দাদার ফসলি জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন কাতলাসুর গ্রামের টুকু মোল্যা। নদীগর্ভে তাদের তিন বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে টুকু মোল্যা বলেন, কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। কিন্তু মুহূর্তেই আমার সব জমি নদীর পেটে চলে গেছে। এখন চাষাবাদ করার কোনো জমি আর থাকলো না। একই এলাকার ফান্টু খাঁ জানান, হঠাৎ নদীতে তার কমপক্ষে দুই বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। অপর কৃষক জিন্নাহ মিয়া জানান, তার এক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, সিরাজুল ইসলাম শরীফ, হুরি বেগম জানান, আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে স্বপ্ননগরে একটু আশ্রয় পেয়েছিলাম। এখন এই আশ্রয় হারালে আমাদের আবার পথে পথেই থাকতে হবে।
কালতাসুর গ্রামের আফজাল মোল্যা জানান, নদী থেকে ১০০ মিটার দূরে আমার বাড়ি। যেভাবে নদী ভাঙছে জানিনা কি হবে। বাড়ির এই জমিটুকু ছাড়া আমার থাকার জন্য আর কোনো জমি নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এরপর তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, ফসলি জমি বিলীনের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ভবিষ্যতের জন্য নদীর স্রোত ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
আরএ