ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাহসী শিশু শিহাব-লিটন এখন রেলওয়ের ‘বীর সৈনিক’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
সাহসী শিশু শিহাব-লিটন এখন রেলওয়ের ‘বীর সৈনিক’ রেলওয়ের ‘বীর সৈনিক’ উপাধি পাওয়া সাহসী শিশু শিহাব-লিটন। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে তেলবাহী ট্রেন রক্ষাকারী দুই সাহসী শিশুকে রেলওয়ের ‘বীর সৈনিক’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহীর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খায়রুল আলম আলোচিত শিহাবুর রহমান (৬) ও লিটন আলীকে (৭) এ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

সাহসী দুই শিশু বাঘা উপজেলার আড়ানি ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শিহাব গ্রামের সুমন আলীর ছেলে ও লিটন শহীদুল ইসলামের ছেলে।

শিহাব প্রথম ও লিটন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। রেলের জমিতে পরিবারের সঙ্গে তাদের বসবাস।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর)  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী রেলস্টেশনে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শিহাব-লিটনকে। অনুষ্ঠানে তাদের উপাধি ছাড়াও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নির্দেশে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা এবং ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে দুই শিশু সংবর্ধনাস্থলে গেলে তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম। অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক সাবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী ও সিসিএম মিহির কান্তি গুহ।

বক্তব্য দেন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের ওপেন লাইন শাখার সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও সদর দফতর শাখার সভাপতি মোতাহার হোসেন এবং বিআর শাখা বিভাগীয় রেলওয়ের ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর দফতর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও ওপেন লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুল আলম বলেন, এই শিশুরা দেশের সকল নাগরিককে দেশপ্রেমের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। দেশের প্রতিটি জিনিস জাতীয় সম্পদ। এগুলো রক্ষায় সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

সারাদিন সংবর্ধনা নিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে দুই শিশুর একজন।  ছবি: বাংলানিউজট্রেন রক্ষাকারী দুই শিশুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

সংবর্ধিত শিশু শিহাব ও লিটন বলে, রেললাইনের পাশে খেলতে গিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত লাইন দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে লাল মাফলার নিয়ে এসে রেললাইনের ওপর টেনে ধরে পরের ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। পরে ট্রেনচালক নেমে তাদেরকে সালাম দেন।

দুই শিশুর বাবা-মায়েরা বলেন, তাদের ছোট ছোট এই সন্তানেরা ট্রেন থামিয়ে এমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে, তা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। তারা এখন সন্তানদের নিয়ে গর্বিত। তারা চান, প্রতিটি ঘরে ঘরেই এমন শিশুর জন্ম হোক এবং দেশের জন্য কাজ করুক।

সকালে বাঘা উপজেলা পরিষদ হলরুমে রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিহাব ও লিটনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান তাদের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট, নগদ পাঁচ হাজার করে টাকা ও গরম কাপড়। জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছাও।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) পশ্চিম রেলের পাকশি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাদেরকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে।

গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বাঘা উপজেলার আড়ানি রেলস্টেশনের ৪০০ মিটার দূরে ঝিনা রেলগেটে জ্বালানি তেলবাহী ট্রেনটি দুই শিশুর বুদ্ধিমত্তায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রেললাইন ভাঙা দেখে গলার লাল মাফলার দেখিয়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দুর্ঘটনা রুখে দেয় তারা। ৩২টি বগিতে কোটি টাকার তেল নিয়ে খুলনা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল ট্রেনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এসএস/এএসআর
**
সেই দুই শিশুকে সংবর্ধনা দিল রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।