ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিঁদুরে রাঙা দুর্গা, আগামী বছর উৎসবের প্রত্যাশা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
সিঁদুরে রাঙা দুর্গা, আগামী বছর উৎসবের প্রত্যাশা পূজামণ্ডপ, ছবি: ডিএইচ বাদল

কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ, ঢাকেশ্বরী থেকে: দূর্গোৎসব। যদিও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতর জন্য সাত্বিক, তবুও সনাতন ধর্মীদের প্রাণের উৎসব।

তাতে আবার বিজয়া দশমী। তাহলে মনে রঙ না লাগিয়ে কী থাকা যায়! তাই তো সেই রঙে রাঙা হলো দেবী দুর্গার মুখও।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) এবারের দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী। শেষ হয়েছে সব আয়োজন। এবার দেবীকে বিদায় দেওয়ার পালা। ঢাকেশ্বরী মণ্ডপে ঘট বিসর্জনের পর হয়েছে ‘সিঁদুর বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে।

বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দুর্গাকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। একে অনেকে সিঁদুর খেলাও বলে থাকেন। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে হচ্ছে না সিঁদুর খেলা।

মুখ রঙিন করে হাসি মুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ, গান করেন, যেন সারাটা বছর এমন আনন্দেই কাটে। তবে এবার সিঁদুর খেলা না হলেও সিঁদুর বরণের মধ্য দিয়ে ঠিকই সিঁদুরের রঙে রাঙা হয়ে উঠেছে মায়ের মুখ। আর তা দেখেই যেন শান্তি ভক্তদের।

এ বিষয়ে ঢাকেশ্বরী মণ্ডপে আগত ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, এ বছর করোনার জন্য আমরা সব ধরনের উৎসবের আয়োজনগুলোকে বিরত রেখেছি। সেভাবে আনন্দ উদযাপনের কোনো রেশ নেই। মায়ের কাছে আমরা প্রার্থনা করছি যেন আমরা আগামীবার একটি সুন্দর উৎসব উদযাপন করতে পারি। এ বছর আমরা অনেককেই হারিয়েছি। এ জন্য আমরা নিজেরাও অনেকটাই ব্যথিত। সেই ব্যথা সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করা যায় না। তাই আমরা সাত্বিকভাবে পূজা সম্পন্ন করেছি। বিরত থেকেছি সিঁদুর খেলা থেকেও। এমনকি মায়ের পা ছাড়া আমরা একে অন্য কেউ এবার সিঁদুর ছোঁয়াইনি। আর সবাই চেষ্টা করেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার।

অপর দর্শনার্থী নিবেদিতা বকশি জানান, এবছর করোনা পরিস্থিতির জন্য সিঁদুর খেলা হচ্ছে না। তবে মায়ের পায়ে সিঁদুর ছুঁইয়ে মঙ্গল কামনা করার ইচ্ছে রয়েছে। একইসঙ্গে প্রার্থনা থাকবে আগামী বছর যেন উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর আজকের দিনে সিঁদুর রাঙা মাকে দেখলেই একটা আলাদা শান্তি অনুভূত হয়।

রীতি অনুযায়ী সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সবাই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নিতে। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে সিঁদুর খেলায় মত্ত হন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, এ বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য সিঁদুর খেলাটা আনুষ্ঠানিকভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সিঁদুর খেলাকে কেন্দ্র করে সাধারণ দর্শনার্থীরাও যারা এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন তাদের কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন না করেন বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আহ্বান করা হয়েছে সব মণ্ডপে।

এদিকে, সিঁদুর বরণের আগেই সম্পন্ন হয়েছে দর্পণ বিসর্জন। এরপর বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ওয়াইজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন দোলায় এবং বিদায় নেবেন গজে চড়ে। বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহাআরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

দুপুর বারোটা থেকে ঢাকায় প্রস্তুত থাকবে বিসর্জনের ঘাটগুলো। রাজধানীর বেশিরভাগ বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গার সোয়ারীঘাটে। টঙ্গীর তুরাগ নদীতেও বিসর্জন চলবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সবাইকে বিসর্জন শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি। বিসর্জনের সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি বিসর্জন ঘাটে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রস্তুত থাকবেন। এবছর পূজায় কোনো ধরনের শোভাযাত্রা হবে না। একটি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনে যে কজন প্রয়োজন শুধু তাদেরই প্রতিমার সঙ্গে ঘাটে আসতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।