ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে বাজেয়াপ্ত টেন্ডারের কোটি টাকা হাতানোর পাঁয়তারা   

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
নাটোরে বাজেয়াপ্ত টেন্ডারের কোটি টাকা হাতানোর পাঁয়তারা   

নাটোর: আদালতে দায়ের করা মামলার জবাব না দিয়ে বরং পছন্দের ঠিকাদারকে বাতিল হওয়া কাজ পাইয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে নাটোরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।  

অভিযোগ রয়েছে, এজন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার দু’টি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বাজেয়াপ্ত হওয়া টেন্ডার সিকিউরিটির প্রায় কোটি টাকা নিয়ে নানা তালবাহানাসহ আত্মসাতের পায়তারা করছেন তিনি।

আর এ কাজ বাস্তবায়নে ইজিপি পদ্ধতির পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নতুন করে চুক্তি এবং টেন্ডার সিকিউরিটি মানি ও প্রফেসনাল ব্যাংক গ্যারান্টি নেন বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ঠিকাদার।  

অবশ্য এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এদিকে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে অবৈধ সুবিধা নিতে আদালতের নির্দেশনাকে পুঁজি করে বাতিল হওয়া ওই দু’টি সড়ক উন্নয়ন কাজ নতুন করে বরাদ্দ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার চুক্তি করেছেন ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। এছাড়া দপ্তরের বিভিন্ন টেন্ডারে প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদারের নামে কাজ পাইয়ে দিতে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এরই মধ্যে ৩০ কোটি টাকার একটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ তার পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতে গিয়ে তার ছলচাতুরি ধরা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজাপুর থেকে জোনাইল প্রায় ১৮ কিলোমিটার ও চংধুপইল থেকে আব্দুলপুর প্রায় ২০ কিলোমিটার দু’টি সড়কের উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। যা ইজিপির লিমিটেড স্ট্যান্ডার্ড ম্যাথর্ড (এলটিএম) বিধি অনুযায়ী টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এতে শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। শর্ত অনুযায়ী দরপত্র খোলার ১২ কার্যদিবসের মধ্যে প্রফেসনাল গ্যারান্টি মানি জমা দিতে ব্যর্থ হয় শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।  

এ কারণে ওই ঠিকাদারের জমাকৃত প্রায় কোটি টাকার টেন্ডার সিকিউরিটি বাজেয়াপ্তসহ টেন্ডার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। পরে ঠিকাদার শহীদ ব্রাদার্স এলজিইডির এ আদেশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চেয়ে একটি উকিল নোটিশ পাঠান।  

কিন্তু নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সেই উকিল নোটিশের জবাব না দিয়ে প্রকারান্তরে কৌশলে শহীদ ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারের পক্ষে অবস্থান নেন বলে অভিযোগের সুরে বলেন টেন্ডারে অংশ নেওয়া অন্যান্য ঠিকাদাররা। পরে ওই ঠিকাদার আদালতে মামলা দায়ের করেন।  

কিন্তু এ ব্যাপারে নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং নিরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে প্রতিপক্ষ না থাকায় আদালত ঠিকাদার শহীদ ব্রাদার্সের পক্ষে রায় দেন। ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা মেসার্স মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অভিযোগ করে বলেন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম আদালতে দায়ের করা মামলায় অংশ না নিয়ে মূলত শহীদ ব্রাদার্সকে কাজটি পুনরায় পাইয়ে দেওয়ার জন্য কৌশলে অবস্থান নেন।  

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মেসার্স শহীদ ব্রাদার্সের নামে বরাদ্দ করা ওই দু’টি সড়কের কাজ কার্যাদেশ বাতিল করে বাজেয়াপ্ত করা টেন্ডার সিকিউরিটি ৯৬ লাখ টাকা নির্বাহী প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করা হয় এবং দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মতামত দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়।  

কিন্তু বর্তমানে নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম আদালতের নির্দেশনাকে পুঁজি করে বাতিল হওয়া দু’টি সড়ক উন্নয়ন কাজ মেসার্স শহিদ ব্রাদার্সকে পাইয়ে দিতে ইজিপি পদ্ধতির পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি এবং টেন্ডার সিকিউরিটি মানি ও প্রফেসনাল ব্যাংক গ্যারান্টি নেন।  

ঠিকাদার আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার মহেশচন্দ্রপুর এলাকায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদার সুরমা জিন্নাহ জেভিকে পাইয়ে দিতে ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। তিনি ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া অন্যান্য ঠিকাদারদের উচ্চ দর দিতে প্রলুব্ধ করেন। প্রকৌশলীর ছলচাতুরির বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি টেন্ডারে নিম্ন দর দেন। কিন্তু দরপত্র খোলার পর প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদার সুরমা জিন্নাহ জেভিও নিম্ন দর দেয়। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও প্রকৌশলীর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে তার প্রতিষ্ঠানকে নানা অজুহাতে কাগজ-পত্র দাখিলের কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে।  

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম উকিল নোটিশ ও মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, সব বিষয় প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে বিষয়গুলো জানানো আছে। তাদের নির্দেশ মতো কাজ করেছি। টেন্ডার সিকিউরিটির ৯৬ লাখ টাকা নতুন করে কনট্রাক্ট সাইন করার সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।  

তবে উকিল নোটিশের জবাব না দেওয়া ও মামলায় অংশ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।