ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লোকসুরে হৃদয় ভরিয়ে দেন ননীগোপল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২০
লোকসুরে হৃদয় ভরিয়ে দেন ননীগোপল বাউল সুরে হৃদয় ভরান ননীগোপাল। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: সকালটা তখন নিজের মতো করে চোখ মেলেছে। শহুরে জীবনে ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে কাজে ফেরার।

কর্মস্থলের কর্মজীবী মানুষগুলোর যাতায়াতের পালা। এমন সকালের একটি মুহূর্তে হঠাৎ বেজে উঠে আকুল করা লোকসুর।
 
দোতারার মনোমুগ্ধময় ঝংকার কৃত্রিম জীবনযাপনে সুরের সুধা ছড়ায়। সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের কেউ কেউ এমন বাউল সুরের মূর্ছনায় এগিয়ে আসেন। আঞ্চলিক ভাষায় অনুরোধ করে বলে উঠেন- ‘আরো একটা গান শুনাও বা। ’   
 
শুধু শিল্পীই নন, অসাধারণ এক দোতারা বাদকও তিনি। দোতারার উপর এবং নিচে আঙুলের কোনায়-কোনায় অপূর্ব সুরধ্বনি জেগে ওঠে। বাদ্যযন্ত্রের মাঝে দোতারার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। যা আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে গৌরবান্বিত করে রেখেছে।   
 
সদা হাস্যময় এই বাউলশিল্পীর মুখে যেন ক্লান্তিহীন হাসি। অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ বাউল শিল্পীরা একটা গান শুনানো বাবদ নির্ধারিত দশ টাকা নিয়ে থাকলেও এ গায়কের কোনো চাহিদা নেই। যে যত দেয়, তিনি হাসিমুখে নিয়ে নেন। কেউ মাত্র দুই টাকা দিলেও একেবারেই অখুশি নন তিনি।
 
ক্ষণিকের এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের প্রতি আকর্ষণ জেগে উঠে নিমিষেই। আলাপচারিতা থেকে জানা যায় এই লোকশিল্পীর নাম ননীগোপাল সরকার। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের সানুয়া গ্রামে থাকেন তিনি।

বাংলানিউজকে এ বাউলশিল্পী বলেন, ‘গান গেয়ে মানুষের প্রাণ ভরাই। কেউ আমার গান শোনার পর ভালো হয়েছে বললে, মানটা পরমানন্দে ভরে ওঠে। আরেকটা গান শোনাতে ইচ্ছা করে। এর বিনিময়ে যে যা দেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করে নিয়ে নেই। আমার কোনো প্রকার চাহিদা নেই। আর মানুষকে গান শোনাতে বড় বেশি ভালো লাগে আমার। ’
 
‘পুরো কার্তিক মাসের ভোরে ঈশ্বরের গান গাইলে মঙ্গল হয়– এমন বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর সুনামগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল আসি। এসে থাকি আমার গুরুদেব মহাশয়ের বাসায়। যার কাছ থেকে জীবনের দীক্ষা নিয়েছি। প্রতিদিন সকাল ৮টা-৯টায় বের হই শহরের মানুষকে গান শোনাতে’, যোগ করেন ননীগোপাল।

সংসার কীভাবে চলে? এর উত্তরে জানান, তার ২ ছেলে ২ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরাও নিজেদের মতো করে প্রতিষ্ঠিত। স্ত্রী লক্ষ্মীরাণি সংসারি মানুষ, বাড়িতে থাকেন। ছেলেরা তাদের মাকে দেখে। তিনি পথে পথে গান গেয়ে বেড়ান। থাকেন বিভিন্ন ধর্মীয় সেবাশ্রম এবং প্রতিষ্ঠানে। খাওয়া-দাওয়া সেখানেই।
 
গানের মাধ্যমেই বিদেশ ভ্রমণ– এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই গান গেয়েই গিয়েছি গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, নবদ্বীপসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে। জীবনে কখনো কোনো দিন ভাবতে পারিনি আমার গলা আমাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
 
কথা বলতে বলতে এক সময় হতাশা-বিষাদে গলা ভারি হয় ননীগোপালের। কথাগুলো গম্ভীর হয়ে যায়। শেষ প্রশ্নটার উত্তর নিজের মতো করে দিয়ে দেন। সেখানের প্রতিটি বাক্যে বিষাদরঙের আবরণ- ‘বাবু, এখন তো জীবন থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। একটা মূল্যবান মানব-জীবন পেলাম, মানুষের কোনো উপকারেই আসলাম না। এ বড় কষ্ট! বাকিটা দিন অমরত্বের গান শুনিয়ে মানুষের হৃদয় ভরাতে চাই। এভাবেই যেন শেষ বিদায়ের ঘণ্টাটা বাজে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
বিবিবি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।