ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

স্কপের ৯ দফা না মানলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
স্কপের ৯ দফা না মানলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ও স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশের পাটকল-চিনিকলগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু ও আধুনিকায়ন আইন করে মালিকানা নির্বিশেষে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়নসহ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নয় দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা। একই সঙ্গে আগামী মে দিবস বা বাজেটের আগে স্কপের দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি ঘোষণা করেন তারা।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাসদের গলিতে স্কপের নয় দফা দাবির সমর্থনে দেশব্যাপী বিক্ষোভ দিবস পালনের অংশ হিসেবে শ্রমিক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।  

সমাবেশে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ও স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। কিন্তু আজকে আমরা কোথায় আছি। মালিকরা আমাদের মজুর দাস হিসেবে দেখে। ৩০ বছর শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে আজ ধনী বা টাকার মালিক হয়েছেন। সেটা আপনাদের টাকা না শ্রমিকদের মজুরি আত্মসাতের টাকা। আর আমলাতন্ত্র দেশের নাগরিক শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। সরকার আমাদের নিয়ে তামাশা করছেন। এটা সহ্য করার মতো নয়। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।  

সরকার ও মালিক শ্রেণিকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই অভুক্ত মানুষের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিলে বীভৎস ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা মারাত্ম রূপ নিয়ে গোটা সমাজকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই সামনে যদি মালিকরা হুঁশিয়ার না হয়, সরকার যদি সতর্ক না হয় এবং আগামী মে দিবস বা বাজেটের আগে শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা আঙ্গুল বাঁকা করবো। প্রয়োজনে দেশ অচল করে হলেও আমাদের বাঁচার মতো ব্যবস্থা আদায় করে নেবো বলে হুঁশিয়ারি করেন তিনি।  

সমাবেশে নেতারা বলেন, করোনাকালে যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যখন রাষ্ট্র এ দায়িত্ব শিকার করে নিয়ে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা হিসাবে ভর্তুকি-ঋণ দিচ্ছে, সেই সময়েই রাষ্ট্রীয় পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষকে কর্মহীন করে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে রাষ্ট্র খুব নগ্নভাবে ধনীদের স্বার্থ রক্ষাকার যন্ত্র হিসাবে নিজের পরিচয় উন্মোচিত করেছে।  

এদিকে টিআইবি বলছে, সরকার করোনা মোকাবিলায় যে এক লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার ৮০ শতাংশের বেশি টাকা মালিকদের সুবিধাই ব্যবহার হয়েছে। অথচ স্কপের সুনিদিষ্ট প্রস্তাব অনুসারে মাত্র এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করার পরিবর্তে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের পরামর্শে লোকসানের অভিযোগ তুলে তার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো। পাটকলের মতো একইভাবে কয়েকশত কোটি টাকা ঋণ ও লোকসানের অভিযোগ তুলে চিনিকলগুলোর মধ্যে ছয়টি চিনিকল উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, পুরাতন ঋণ ও ঋণের সুদ মওকুফ এবং পরিচালনা প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দুর্নীতি বন্ধ করে চিনিকলগুলোকে লাভজনক করা সম্ভব। রাষ্ট্র এ কয়েকশত কোটি টাকা বরাদ্দ করেনি কিন্তু বেসরকারি শিল্প মালিকদের হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন বা মওকুফ করেছে।  

সমাবেশে পরিষদের নেতারা আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় কলকারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি। মুখে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর কথা বলা হলেও সরকার কর্মচারীদের প্রায় দশগুণ মজুরি বৈষম্যের ২০ গ্রেডের বেতন স্কেলের মাধ্যমে আর ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্পের মজুরি নির্ধারণে আইনি কোনো মানদণ্ড অনুসরণ না করে রাষ্ট্রে সমাজের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি করছে।

স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুব মান্নানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুর আহসান, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকীল আক্কার চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ।

সমাবেশে সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।