ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আজ চুকনগর গণহত্যা দিবস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
আজ চুকনগর গণহত্যা দিবস

খুলনা: ২০ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে এদিন চুকনগর এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিকামী ১০-১২ হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চুকনগরের গণহত্যা এক কালো অধ্যায় রচনা করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ে এ ধরনের ভয়াবহ গণহত্যার নজির পাওয়া যায় না।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা যে নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তার এক নিশ্চুপ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুকনগর।

এলাকার প্রবীণরা জানান, পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশের খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনগোষ্ঠী জীবন বাঁচানোর তাগিদে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় বৃহত্তর খুলনার বাগেরহাট, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া, শরণখোলা, মংলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, চালনা, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

ভারতে যাওয়ার জন্যে তারা ট্রানজিট হিসেবে বেছে নেন ডুমুরিয়ার চুকনগরকে। ১৯ মে রাতে সবাই সেখানে পৌঁছান। পরদিন সকালে সাতক্ষীরা এবং কলারোয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার জন্য চুকনগরে সমাবেত হন তারা। আর সেখানে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। হাজার হাজার মানুষ চুকনগরের পাতোখোলা বিল, কাঁচাবাজার চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন শশ্মানে আশ্রয় নেন।

সারারাত নির্ঘুম কাটানো শরণার্থী হতে যাওয়া এসব মানুষরা সকালে বিশ্রাম সেরে ভাত রান্না শুরু করেন। আর কেউ চিড়ে-মুড়ি ও অন্যান্য শুকনো খাবার দিয়ে শরীরে চলার শক্তি সঞ্চার করে নিচ্ছিলেন।

কিন্তু ২০ মে সকাল ১০টার দিকে তিনটি ট্রাকে করে হঠাৎ পাকিস্তানি সেনারা চুকনগর বাজারের ঝাউতলায় (তৎকালীন পাতখোলা) উপস্থিত হয়। আর তাদের সঙ্গে ছিল হালকা মেশিনগান ও সেমি-অটোমেটিক রাইফেল। সাদা পোশাকে মুখঢাকা লোকজনও আসে সেখানে। এরপর দুপুর ৩টা পর্যন্ত তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে।

হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার আশায় অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই ডুবে মারা যান। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে যায় চুকনগর ও আশপাশের বাতাস। মাঠে, ক্ষেতে, খালে-বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ।

বর্বর পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ শেষে এসব স্থান থেকে লাশ নিয়ে নদীতে ফেলার কাজ শুরু করেন স্থানীয়রা।  

চুকনগরের ফসলি জমিগুলোতে আজও মেলে সেদিনের শহীদদের হাড়গোড়, তাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন অলঙ্কার। চুকনগরে সেদিন কতো লোক জমায়েত হয়েছিলেন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। অনেকেই ধারণা করেন তারা লক্ষাধিক ছিলেন।  

এদিকে শুক্রবার (২০মে) দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চুকনগর বধ্যভূমিতে পতাকা উত্তোলন, শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টার দিকে চুকনগর কলেজ থেকে র‌্যালি নিয়ে ভদ্রা নদীর ব্রিজ এলাকায় অবস্থান ও শহীদদের স্মরণে গোলাপের পাপড়ি ভদ্রা নদীতে ছাড়ানো হয়েছে।


বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
এমআরএম/এফআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।