ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড ‍দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড: রুমিন ফারহানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড ‍দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড: রুমিন ফারহানা

ঢাকা: সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানা।  

এ ঘটনায় ডিপো মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।



বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য সৈয়দ আবু বাবলা ঘটনাটি দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে এমন প্রশ্ন তোলেন।

সোমবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে রুমিন ফারহানা এবং আবু হোসেন বাবলা এ কথা বলেন।  এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলেছে, ওই ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখার বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। এই ধরনের পণ্য সংরক্ষণে বিশেষ ধরনের অবকাঠামো দরকার কিন্তু ওই ডিপোতে সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার সার্ভিসও বলেছে, ডিপোর মালিকপক্ষের কেউ সেখানে কেমিক্যাল রাখার বিষয়টি জানায়নি। সেটা তাদের জানা থাকলে অগ্নিনির্বাপনের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা হতো। তাতে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যেত। ফায়ারকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা হয়তো এতে হতো না। এই জীবনগুলো ঝরে গেছে কন্টেইনার ডিপোর মালিকের চরম উদাসিনতায়।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান। সরকারি দলের এমন একটি পদে থেকে তিনি কোনো নিয়ম-কানুন মানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। তিনি অনুমোদন ছাড়া ডিপো তৈরি করেছেন, সেই ডিপোতে অনুমোদন না নিয়ে কেমিক্যাল রেখেছেন এমন কী যখন সেখানে আগুন লেগেছে তখন অগ্নিনির্বাপনের জন্য যারা গেছেন তাদেরকে কেমিক্যালের বিষয়ে কোনো ধরনের অবহিত করেননি। এই খুঁটির জোর তিনি কোথা থেকে পেলেন? এই খুঁটির জোর তিনি পেলেন এই কারণেই যে, এই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ক্ষমতাসীন দলের এমন একটি পদে থেকে কোনো নিয়ম-কানুন মানার প্রয়োজনীয়তা সম্ভবত তিনি বোধ করেননি।  

এর আগে, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে মারা যায় ১১১ পোশাককর্মী। সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। এ মামলার ১০ বছর হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বরং এই দেলোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। দুই দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আইন ভঙ্গ করে তিনি ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই স্টোর করেছিলেন। আমি আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে অনুরোধ জানাবো যাতে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

রুমিন ফারহানা আরও বলেন, রাজধানীর নিমতলীতে ২০১০ সালে এই দিনে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ১২৪ জন। শুনতে খুব অবাক লাগলেও সত্য যে, এই বিভৎসতম দুর্ঘটনায় যেখানে ১২৪ জন মারা গেছেন সে ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। একটি জিডি হয়েছিল যার তদন্ত এখনো চলমান। নিমতলীর ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, কোনো মামলা হয়নি। এর ফলশ্রুতিতে চুরিহাট্টায় ঘটে একই ঘটনা। এ দুটি ঘটনার কারণ একটাই কেমিক্যাল গুদাম। ওই ঘটনার সরকার বলেছিল কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো পুরনো ঢাকা থেকে সেই গুদাম সরানো হয়নি। সেখানে ১৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম ও দোকানের নামে বারুদ রয়েছে। মানুষ বসবাস করছে এর মধ্যে।

এই একই বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন, বিরোধীদল জাপার সৈয়দ আবু বাবলা।  

তিনি বলেন,সীতাকুণ্ডের নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ ঘটনাটিকে কী আমরা দুর্ঘটনা হিসেবে সান্তনা নেবো? নাকি এর পেছনে কোন নাশকতা রয়েছে। নিশ্চয়ই সরকার তদন্ত করে তা বের করবে বলে আশা রাখি। যদিও এসব ঘটনার তদন্তের আলোর মুখ আমরা দেখিনি। এ দুর্ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন সামনে আসছে। টেলিভিশন টক-শোতে সরকার পক্ষের সব বক্তব্য দেখি পজিটিভ আর বিরোধী পক্ষের বক্তব্য পাই নেগেটিভ। জানতে চাই একটি জনবহুল এলাকাতে কীভাবে ডিপোর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। আমরা ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট দেই কিন্তু কেন ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আনতে পারি না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমরা পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প সম্পন্ন করি তখন বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বিশ্ব গণমাধ্যম আমাদের প্রশংসা করে খবর হয়। কিন্তু এর বিপরীতে এই আগুনে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় সেই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়? ফায়ারকর্মীদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে পারলে সীতাকুণ্ডের ট্র্যাজেডির গল্পটা পজিটিভভাবে বিশ্বের কাছে আসতো। কিন্তু সেটা হলো না। সরকারকে বলতে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প করছেন ভালো কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা যোজন যোজন দূরে আছি সীতাকুণ্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২২
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।