কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): দ্রুতগতি, বিশৃঙ্খল চলাচল আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে দেশের একমাত্র এক্সপ্রেস হাইওয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বেড়েই চলছে দুর্ঘটনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীকে সংযুক্তকারী এই মহাসড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে দুই ধারে বাহারি ফুল ও গাছের সারি, দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার, নতুন দেখা আন্ডারপাস আর কিঞ্চিৎ বাঁকা উড়াল সড়ক দেখে মনে হবে এটি উন্নত বিশ্বের কোনো মহাসড়ক। দু'পাশে লোকাল রাস্তা, মাঝ দিয়ে বয়ে চলা দেশের একমাত্র এক্সপ্রেস হাইওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা মহাসড়ক। ৫৫ কিলোমিটারেএই মহাসড়কে কোনো প্রকার সিগনালের বাধা ছাড়াই দ্রুতগতিতে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন। ২০২০ সালের মার্চে সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরুর পর থেকে এর সুফল পাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক কোটি মানুষ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ।
প্রতিদিন রাস্তাটি দিয়ে গড়ে কমবেশি দেড় হাজার যানবাহন চলাচল করে, যার অর্ধেকই যাত্রীবাহী বাস। আর এসব বাস ব্যস্ত মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া, ঝিলমিল আবাসিক এলাকা, আব্দুল্লাহপুর, সিরজদিখানের কুচিয়ামোড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে। ফলে মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনার কবলে পড়া ভাঙাচোরা যানবাহন সাক্ষী দিচ্ছে অসংখ্য দুর্ঘটনার।
শরীয়তপুর থেকে আগত সাকিব নামে এক গার্মেন্ট কর্মী জানান, তিনি কালিগঞ্জের একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। বাড়ি যাওয়ার পথে কদমতলী থেকে বাসে উঠেন। কিন্তু বাড়ি থেকে ফেরার সময় সেখানকার বাস মেলে না সব সময়।
তিনি বলেন, তাই বাধ্য হয়ে যাত্রাবাড়ীর গাড়িতে করে এসে ঝুঁকি নিয়েই মহাসড়কের কদমতলী নতুন রাস্তার মোড়ে নামি। এখানে একটা স্টেশন থাকলে সুবিধা হতো।
বরিশালের গৌরনদীর রহমত হাওলাদারেরও একই অবস্থা। কাজ করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারার একটি কারখানায়। তেঘুরিয়া মোড়ে একটি যাত্রী ছাউনি থাকলেও গাড়ির ড্রাইভাররা সেখানে না থামিয়ে থামাচ্ছে ঝিলমিল আবাসিকের সামনে। তাই বাধ্য হয়ে সেখানেই নামেন।
শরীয়তপুর পরিবহনের চালক হাসান বলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা সঠিক হয়নি। তাছাড়া যাত্রীরা নামতে চাইলে আমরা না নামিয়ে পারি না।
অনেক চালক জানান, অন্যরা থামায়, তাই তারাও থামান। না থামালে যাত্রীরা খারাপ ব্যবহার করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ মহাসড়কে যাত্রী ছাউনি ও অবৈধ ষ্টেশন থাকায় মানুষ ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে বিশাল রাস্তা। রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় অনেকে হারাচ্ছেন প্রাণ। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন বলছে, মহাসড়কে আগের চেয়ে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। আমরা অবৈধভাবে পার্কিং করা গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে নানা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশের পাশাপাশি যাত্রী ও চালকরা সচেতন হলে দুর্ঘটনা আরও কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
এমএমজেড