ঢাকা, বুধবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

সিগন্যাল না মানায় ট্রেন দুর্ঘটনা, ২ লোকো মাস্টার সাময়িক বরখাস্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪১, অক্টোবর ৭, ২০২৫
সিগন্যাল না মানায় ট্রেন দুর্ঘটনা, ২ লোকো মাস্টার সাময়িক বরখাস্ত লাইনচ্যুত ট্রেন

সিগন্যাল না মানার কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয় আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনটির লোকো মোটিভ মাস্টার (চালক) সিগন্যাল না মানায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ের কর্মকর্তা।

দুর্ঘটনার তথ্য খতিয়ে দেখতে তাৎক্ষণিক রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ঢাকা, চারসদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী।

এছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসন থেকেও আলাদা কমিটি করা হয়েছে। উভয় কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য রেলওয়ের তদন্ত কমিটি ট্রেন দুর্ঘটনায় দায়িত্বশীল দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে দুর্ঘটনার পর কমিটি গঠন ও বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

বরখাস্তকৃতরা হলেন- লোক মাস্টার (চালক) মো. ইলিয়াস ও সহকারী লোক মাস্টার জহিরুল ইসলাম নোমান।

এর আগে মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে মোগলাবাজার রেলস্টেশনের কাছে ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে তিন যাত্রী আহত হন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও ট্রেনের অন্যান্য যাত্রী উদ্ধার কাজে অংশ নেন।

খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। তিনি ট্রেন চলাচল সচল রেখে উদ্ধার কাজ পরিচালনার নির্দেশনা দেন এবং বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”

এদিকে রেলওয়ের প্রকৌশলসহ চারটি ইউনিটের কর্মীরা দ্রুত উদ্ধার ও মেরামত কাজ শুরু করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি লাইন সচল করা সম্ভব হয়। পরে সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোগলাবাজার থেকে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রেখে ফাঁকে ফাঁকে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রেলওয়ে ওয়েম্যান (প্রকৌশল বিভাগ), ক্যারেজ সেকশন, লোক সেকশন ও সিগন্যাল সেকশনের লোকজন কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু লাইনচ্যুত ট্রেনটির ইঞ্জিন রেললাইন থেকে একটু দূরে পড়ায় কুলাউড়া জংশন থেকে আসা হাইড্রোলিক রিলিফ ট্রেন উদ্ধার কাজে ব্যর্থ হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আখাড়াউড়া জংশন থেকে ডিজিটাল রিলিফ ট্রেন আনা হয়। সেই সঙ্গে ৩০/৪০ জন কর্মী উদ্ধারে কাজ করে ইঞ্জিন উদ্ধারে ব্যর্থ হন। পরে ঢাকা থেকে ডিজিটাল রিলিফ ট্রেন চাওয়া হয়েছে।
 
রেলওয়ে আখাউড়া জংশনের লোকো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনের বগি উদ্ধার করতে আখাউড়া থেকে ৮০ টনের ডিজিটাল ক্রেন আনা হলেও পড়ে যাওয়া ট্রেনের ৬০ টনের ইঞ্জিন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ঢাকা থেকে ৮০ টনের আরেকটি ক্রেন আনা হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, ট্রেন লাইন বন্ধ রেখে কাজ করলে উদ্ধারকাজে কম সময় লাগতো। যেহেতু রেলপথ চালু রেখে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে, তাই সময় একটু বেশি লাগবে। উদ্ধার কাজ শেষ করতে সন্ধ্যা পার হয়ে যেতে পারে।  

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিন ও আরও তিনটি বগি লাইনচ্যূত হয়ে যায়। এতে তিন যাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, ট্রেনের অন্যান্য বগির যাত্রীরা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুর্ঘটনাকবলিত বগির যাত্রীদের উদ্ধার করেন।

এদিকে রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ঢাকা, দুর্ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী।

** সিলেটে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪ বগি লাইনচ্যুত, ৩ ঘণ্টা পর সচল লাইন

এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।