আগরতলা, ত্রিপুরা থেকে ফিরে: সুগন্ধি আগর গাছের নাম থেকেই ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার নামকরণ। ত্রিপুরার অহংকার রয়েছে, কখনোই কোনো সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল না।
ত্রিপুরার রাজাদের ঐতিহ্যে ঘেরা শহর আগরতলা। রাজবাড়ি উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদ এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শনীয় স্থান। বাইরে যতই ছবি তোলেন, ভেতরে তার উপায় নেই।
রাজপরিবারের মধ্যে বীরচন্দ্র মাণিক্য ছিলেন অন্যতম। তিনি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন। তাই যখন রবীন্দ্রনাথকে সন্মাননা দেন ত্রিপুরায় এনে, রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার তখন বয়স আল্প, লেখার পরিমাণ কম এবং দেশের অধিকাংশ পাঠক তাকে বাল্যলীলা বলে বিদ্রূপ করতো’।
মূলত তৎকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথের বই চলতো না। কিন্তু বীরচন্দ্রের দাদা বীরবীক্রম কলকাতা সফরকালে রবীন্দ্রনাথের কয়েকশত কপি বই কিনে নিয়েছিলেন। যার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কবি।
ত্রিপুরাজুড়েই রয়েছে রাজপরিবারের অসংখ্য নিদর্শন এবং কবিগুরুর উপস্থিতি। ৭৬ দশমিক ৫০৪ বর্গ কিলোমিটারের শহর আগরতলা ঘুরে নেওয়া যায় একদিনেই। এখানকার মানুষের ভাষা পশ্চিমবঙ্গের মতো নয়। বরং পুরোটাই আমাদের মতোন। বিশেষ করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ভাষাই বলা যায়।
আগরতলায় মানুষের ঘনত্ব আমাদের ঢাকার তুলনায় নেই বললেই চলে। তবে রয়েছে বেশ চওড়া কিছু রাস্তা।
আখাউড়া থেকে সীমানা পেরোলেই আগরতলা শহর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই শহরের অবদান অনেক। এখনও শহরের চৌমুহনীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে একটি পাকিস্তানি ট্যাংক। যুদ্ধ জয়ের পর মিত্রবাহিনী স্মৃতি হিসেবে এটি নিয়ে যায়।
এখানে রয়েছে রবিন সেনগুপ্তের মতো মানুষেরা। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের পরিবার রেখে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
আগরতলার হেরিটেজ পার্কে ঢুকে দেখে নেওয়া যায়, পুরো ত্রিপুরাকে। বিভিন্ন ট্রেন স্টেশন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর রেপ্লিকা করা হয়েছে এখানে।
আগরতলায় রিকশা, অটো, ট্যাক্সি রয়েছে। প্রথমবারের মতো শহরে হতে যাচ্ছে একটি ফ্লাইওভার। বাংলাদেশিদের জন্য আগরতলা শহর ঘুরে আসা দেশের বাইরে পার্শ্ববর্তী যেকোনো শহরের তুলনায় কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমএন/আইএ