বাঙালিরা যাকে সংক্রান্তি বলে আসামি ভাষায় তাকে বলা হয় বিহু। তাই প্রতি মাসেই বিহু আসে, তবে রঙ্গালী বিহু, কাতি বিহু ও ভোগালী বিহু বড় পরিসরে উদযাপন করা হয়।
চৈত্রমাসের শেষে যে বিহু অনুষ্ঠিত হয় তাকে বলা হয় রঙ্গালী বিহু। রঙ্গা শব্দের বাংলা অর্থ হল লাল। চৈত্রমাসে গাছে গাছে শিমূল, পলাশ, মান্দার ফুলে লাল হয়ে থাকে প্রকৃতি। তারপর চৈত্রের শেষ লগ্নে বৃষ্টি হলে গাছে গাছে অর্কিড ফুল ফুটে। এই লালের সমাহার থেকেই রঙ্গালী বিহুর উৎপত্তি বলে মত অনেকের।
এই সময় দেশের বিভিন্ন অংশে ও বিদেশে চাকরির জন্য থাকা আসাম রাজ্যের মানুষ বাড়ি ফিরে আসেন ও পরিবার নিয়ে বিহু পালন করেন।
এই সময় সবাই নতুন জামা কাপড় পরে, বিশেষ করে মুগা সূতায় তৈরি মেখলা চাদর পরে নারী পুরুষ সমবেতভাবে বিশেষ ভঙ্গিমায় ঢোল, শিঙ্গা ও গগনা( বিশেষ ধলনের বাঁশী) বাজিয়ে নৃত্য করেন। যাকে বিহু নৃত্য বলে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই এ আনন্দে সামিল হন। বৈশাখ জুড়েই চলে এ উৎসব। নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানানোর উৎসব ও মাসের শেষে বৈশাখী বিদায়ী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রঙ্গালী বিহু উদযাপনের সমাপ্তি।
অনেকে দল বেঁধে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিহুনৃত্য করে চাঁদা সংগ্রহ করেন ও রঙ্গালী বিহুর দিন সংগৃহীত চাঁদা দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এ সময় আসামের বিভিন্ন এলাকায় বিহু নৃত্যের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে বিহু উদযাপন কমিটি। বিজয়ী দলগুলোকে নগদ অর্থসহ স্মারক উপহারও দেওয়া হয়।
আসামের সব চেয়ে বড় রঙ্গালী বিহুর অনুষ্ঠানটি হয় গৌহাটির জর্জ ফিল্ডে। সেখানে টানা পনেরো দিন ধরে চলে বিহু নৃত্যের আসর। অনুষ্ঠান দেখতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। অনেক পর্যটক আনন্দে গা ভাসিয়ে নেচে মজা নেন বিহু নৃত্যের।
মূলত এই লোকসংস্কৃতির সবটাই ঋতু বৈচিত্র্য ও জীবন যাপনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। বৈশাখের শেষে বৃষ্টি নামলে সবাই নেমে পড়তেন চাষবাসের কাজে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
এসসিএন/জেডএম