বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা সচিবালয়ের নিজকক্ষে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে একথা বলেন পর্যটনমন্ত্রী শ্রী রতন ভৌমিক।
ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে নানামুখী কাজ করছেন রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রী।
রাজ্যের একটি কাটা খাল আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আখাউড়া দিয়ে যাওয়া ত্রিপুরার খালটি নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। এই খালের নোংরা পানি বাংলাদেশে যায়। তাই বাংলাদেশের একটি দাবি ছিলো যেন পানি শোধন করে তবে ছাড়া হয়। ত্রিপুরা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি পরিশুদ্ধ করে পাঠানোর। ইতোমধ্যে পৌরসভা উদ্যোগ নিয়েছে কাজটি সম্পন্ন করার।
পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে ত্রিপুরায়। সেদিক থেকে বাংলাদেশের কাছে ত্রিপুরার পর্যটনকে তুলে ধরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রতন ভৌমিক বলেন, ত্রিপুরায় অনেক ঘোরার জায়গা রয়েছে। বাংলাদেশের অনেকে ঘুরতে দার্জিলিং যায়, কিন্তু দার্জিলিংয়ের মতো জায়গা এখানেও রয়েছে। কিন্তু মানুষ জানে না। যার নাম জম্পু হিল। আগে প্রচুর কমলা হতো সেখানে। এখন একটু কম হয়। ওখানের জলবায়ু এরকম যে গরমের সময় পাখা লাগে না। আবার বৃষ্টি হলে মনে হয় মেঘ কাছে চলে এসেছে।
এছাড়া নীরমহল, ঊনকোটি, ডম্বুর জলাশয়ের মতো আকর্ষণীয় স্পটের কথা জানিয়ে বলেন, ডম্বুর জলাশয়ে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পও রয়েছে। পানির মধ্যে খণ্ড খণ্ড দ্বীপও রয়েছে। চেষ্টা চলছে এর আপস্ট্রিমে কিছু কাজ করার। তাহলে ট্যুরিস্টরা আরও আকর্ষিত হবে। এভাবে রাজ্যজুড়ে বৈচিত্র্য অনেক।
উদ্যোগী এই মন্ত্রী বলেন, দেশভাগের সময় এমনভাবে ভাগ হয়েছে যে ত্রিপুরা মূল ভূণ্ডের সঙ্গে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তিনদিকে বাংলাদেশের সীমানা। একটু আসাম। তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। বাংলাদেশ হয়ে এখন কলকাতা যেতে পারে মানুষ। রেল যোগাযোগও হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সেই একাত্তর থেকে। আমাদের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি শরণার্থী সেসময় এসেছে এখানে। সেই যুদ্ধের স্মৃতিতে বিলোনিয়ার চত্বাখোলায় একটি মৈত্রী পার্ক হচ্ছে। খুব শিগগিরেই এর উদ্বোধন হবে। মুক্তিযোদ্ধারা এখনই দেখতে আসছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের ভাস্কর্য থাকবে এতে।
এসময় ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া সহব জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রশংসা করেন তিনি।
মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য প্রচুর সংখ্যক মানুষ আগরতলা আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে প্লেনে যতো টাকা খরচ হয়, আগরতলা দিয়ে খরচ তার চেয়ে অনেক কম। ২ হাজার আড়াই হাজার রুপি হলে কলকাতা চলে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে আগরতলা আসতে খরচও কম। তাই ট্রানজিটের মতো এটি ব্যবহার হচ্ছে।
ত্রিপুরার অধিকাংশ অধিবাসীর আত্মীয়-স্বজন রয়েছে বাংলাদেশে। সেজন্য তারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন, যান। পর্যটকদের জন্য এখানে বেশ কিছু ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে সরকারি। খরচও কম। স্টার মানের লজ পাওয়া যায় আড়াই হাজার রুপিতে। বিদেশিদের জন্যও সরকারি ভাড়া একই। রাজ্যের সব ট্যুরিস্ট স্পটেই রয়েছে লজ। সেখানে খরচ আরও কম। বলেন তিনি।
এছাড়া রাজ্যের দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিদেশিদের জন্য আলাদা রেট নেই এবং খরচ সবার জন্য সমান বলেও জানান ত্রিপুরার পর্যটন মন্ত্রী রতন ভৌমিক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এএ