কিন্তু দিন বোধহয় আর ‘সু’ নেই। মাছের পাতে কি ‘ছাই’! ত্রিপুরা রাজ্যের বাঙালি গৃহকর্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ছোট মাছের দাম গেছে দ্বিগুণ হয়ে। ধারে পাশে ঘেঁষতে ভয় পাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। আর বড় রুই কাতলাই বা পেটে সয় কতক্ষণ।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের তরফে আগরতলা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হাবুল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাস করা হলে জানান, আখাউড়া আইসিপিতে প্রাণীজ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাগার নেই। তাই কমিশনার অব কাস্টমস থেকে বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু আগে তো এসেছে, এমনকি আইসিপি চালু হওয়ার পরও বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানি হয়েছে। হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা কেন? উত্তরে বলেন, নতুন করে কাস্টমস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা মাছ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে পারছেন না।
রাজ্যবাসীর মধ্যে কথা ছড়িয়েছে পরীক্ষাগারে ধরা পড়েছে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা মাছে মিলেছে বিষাক্ত ফরমালিন।
এ বিষয়ে জানতে যাওয়া রাজ্যের অন্যতম বড় মাছের আড়ৎ বটতলা বাজারে। সেখানেকার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুশান্ত দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমরার কিন্তু মাছ লগে জরম (জন্ম) ছুট বেলাত তলে মাছ দেখিয়া আইতাছি। ফরমালিন কি জিনিস আমরাও জানি না, কই পাওয়া যায়, কে দেয় তাও জানি না। আইজতনে পাঁচ বছর আগে একবার প্রথম ফরমালিনের কথা উঠছিল। এখন আবার নতুন কইরা উঠছে। আসলে এটা কোনো ব্যবসায়ীর চক্রান্ত। আমরা তো জানি মাছ রাখার ল্যাইগা বরফই লাগে। তিনি আরও জানান, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা মাছে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। আর বাংলাদেশে থেকে আমদানি করা মাছ এমনকি ত্রিপুরার গোমতী জেলার ডুম্বুর লেকের মাছেও ফরমালিন পাওয়া গেছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ ডুম্বুর লেকের দূরত্ব মোটে ৮০ কিমি। এখান থেকে গাড়ি আগরতলায় আসতে সময় নেয় মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আর বাংলাদেশ তো আরও কাছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মাছের চাহিদা রয়েছে রাজ্যের বাজারগুলিতে। বিশেষ করে নদী ও হাওরের খোলা পানির মাছ। বাংলাদেশের মাছ না আসায় ব্যবসায় জড়িত প্রচুর সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
ফরমালিনের গুজবে ব্যবসায়ীসহ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব শ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মার্চ মাসে ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুব খারাপ গেছে বলেও জানান তিনি।
সুশান্ত দাসের বক্তব্য, এ বিষয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে ও রাজ্যবাসীকে বাংলাদেশের সুসাদু মাছের স্বাদের সুযোগ দিতে সমাজের সব সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর বটতলা পাইকারি মাছ বাজারে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) গিয়ে দেখা যায়, দুপুর হতে না হতেই লোকজন নেই। বাজার ফাঁকা। এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বরফ দেওয়া মাছের ককশিট। যে পাত্রগুলোতে বাংলাদেশের জ্যন্ত মাছ এনে জিইয়ে রাখা হতো সে পাত্র আছে, পাত্রে পানিও আছে, শুধু মাছ নেই। বাজার শেডের বাইরে দাঁড়িয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মাছ নিয়ে আসা ট্রাক।
বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানি বন্ধ হওয়ায় এর প্রভাব ব্যাপক পড়ছে রাজধানীসহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে। সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা মতো মাছ পাচ্ছে না। আর যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশ থেকে মাছ না আসায় মাছের প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে একশো রুপি থেকে দুইশো রুপি। এ সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।
সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ছোটমাছপ্রেমীরা। কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে দাম দ্বিগুণ হাঁকাচ্ছেন। আগে রাজধানীর লেক চৌমুহনী বাজারে যেখানে মলা মাছ ও চিংড়ি কেজিপ্রতি ৩শ টাকায় মিলতো, সেটা এখন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ত্রিপুরার মাছের বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেই ধারণা ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এসসিএন/এএ