ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরায় মুহুরী তীরের সান্ধ্য বাজারে এক চক্কর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
ত্রিপুরায় মুহুরী তীরের সান্ধ্য বাজারে এক চক্কর ত্রিপুরার মুহুরী নদীর তীরের সান্ধ্য বাজারে ওঠা মাছ

বিলোনিয়া, ত্রিপুরার দক্ষিণ থেকে: ত্রিপুরার দক্ষিণের জেলা বিলোনিয়ার বুক চিরে বয়ে গেছে মুহুরী নদী। রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন নদীটির বাংলাদেশে ঢুকে নাম হয়েছে ছোট ফেনী নদী। রাজ্যের দক্ষিণ জেলার প্রাণকেন্দ্র বিলোনিয়ায় এ নদীর তীরেই মুহুরী ব্রিজের পাশেই গড়ে উঠেছে শহরের প্রধান বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবই এ বাজারে পাওয়া যায় চাহিদামতো।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় মুহুরী নদীর পাড়ে লোকজনের সমাগম ধরে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো বড় এক বাজার। কি আছে এ বাজারে? বাংলাদেশের বাজার ও এ বাজারের মিল-অমিল খুঁজতে আগ্রহ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ।

মুহুরীর তীরের বাজারে ওঠা কাঁচা লঙ্কা বেশ পরিপাটি এ বাজারে বাংলাদেশের বাজারের মতোই খদ্দের দেখলে ক্রেতা আর্কষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন বিক্রেতা। নির্ধারিত স্থানে দোকানে সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। তবে যাদের মূল বাজারে বসার সামর্থ্য নেই তারা নিচের দিকটায় বসেছেন, কিছুটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। আবার এসব দোকানে মেলে ভেষজ গুণ সম্পন্ন বিভিন্ন উদ্ভিদ।

পঞ্চাশোর্ধ্ব গৌতম বাবু, দোকানে হরেক রকমের সবজির পসরা নিয়ে বসেছেন। ক্রেতাও আছেন দু’একজন। আগ্রহ নিয়ে সবজির দাম জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, পটল কেজি ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, লতি ৩০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ টাকা। ব্যতিক্রম হিসেবে কোনো কোনো দোকানে সবজির সঙ্গে নারকেলও বিক্রি করতে দেখা গেলো, জোড়া ৪০ টাকা। বাজারে ওঠা হরেক রকমের সবজি

গৌতম বাবু জানালেন, বাজারে ৭০-৮০টি সবজির দোকান রয়েছে। আশপাশের জেলা ছাড়াও রাজধানী আগরতলা থেকেই এসব পণ্যের সরবরাহ হয়। আবার স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যও পাওয়া যায়। বেচা-বিক্রিও ভালোই বলে মনে হলো ২৬ বছরের বেশি সময় ধরে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করা গৌতম বাবুর মুখে।

তবে গোলাকৃতির কাঁচা লঙ্কা দৃষ্টি আকর্ষণ করলো একটু আলাদাভাবেই। দলের কেউ একজন তিত বেগুন বললেও বিক্রেতা জানালেন কাঁচা লঙ্কা, অন্য কোনো নাম নেই, কেজি ২শ’ টাকা। বর্ষাকালেই এটি পাওয়া যায়। অন্যসময় বাংলাদেশে মতোই লম্বা আকারের লঙ্কা পাওয়া যায়। কাঁচা লঙ্কা সবুজ, পাকলে লাল রং ধারণ করা এ লঙ্কার কিন্তু বেশ ঝাল। পুরো বাজারে ব্যতিক্রমী কোনো সবজিই চোখে পড়লো না।

তবে কি মাছের বাজারেরও একই চিত্র? বৈচিত্রটা চোখে পড়লো না। প্রায় সব দোকানে রুই, কাতল, কার্প জাতীয় মাছের আধিক্য। দু’একটি দোকানে গোলশা টেংরা চোখে পড়লেও দামটা কপালে ভাঁজ ফেললো। বিক্রেতারা দিনের বেলা বিভিন্ন মাছ পাওয়ার কথা বললেও মূলত তাদের নির্ভর করতে হয় এপারের (বাংলাদেশ) চালানের উপর। বাজারের মুরগির দোকানের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা জ্যান্ত মুরগি

মাছ-সবজি পাশাপাশি পেলেও মাংস খুঁজে পাওয়া গেলো একটু দূরে। আর এখানে মজার বিষয় হলো বাংলাদেশের বাজারে জ্যান্ত মাছ যেমন পছন্দ করে কেনা যায়, এখানে দোকানের সামনেই রশি দিয়ে বেঁধে রাখা মুরগি (দেশি, ব্রয়লার) পছন্দ করে কিনতে হবে। ব্রয়লার মুরগির চাহিদা মতো নেওয়ার সুযোগ থাকলেও দেশির বেলায় পুরোটাই নেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এখানে কাটা মুরগির মাংসের ওজনের উপর মূল্য নেওয়া হয়।

বাজারে আর কোথায় কি আছে তা জানতে এদিক-ওদিক তাকালে নিচের দিকটায় কিছু লোকের জটলা দেখা গেলো। কান পেতে বোঝা গেলো তারা খবর শুনছেন। তবে মোবাইলের হেডফোনের পয়েন্টের মাধ্যমে স্পিকারের সাহায্যে খবর শোনার কৌশলটা এক সময় গ্রামের বাড়িতে খুব সকালে রেডিওতে ভয়েস অব আমেরিকার খবর শোনার মতোই মনে হলো। পাশেই কিছু শিক্ষার্থী আড্ডা দিলেও পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু পড়াশোনা নয়, ক্রিকেট তা বোঝা গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
জেডএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।