আধুনিক সভ্যতার নামে বিশেষ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণের ফলে তাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি আজ বিপন্নের পথে।
ইউনেস্কো'র দেওয়া তথ্য অনুসারে প্রতিদিনই বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে উপজাতি গোষ্ঠী ও তাদের সংস্কৃতি।
এ গোষ্ঠীর জন সংখ্যা কমে এখন মাত্র ১২০জন দাড়িয়ে, পরিবারের সংখ্যা ৩১টি। তারা মূলত হালাম উপগোষ্ঠী। তাদের নিজেস্ব ভাষা রয়েছে। করবং ভাষায় গান নৃত্যসহ আচার আচরণ রয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় এ ভাষা সংস্কৃতির কোনো সংরক্ষণ হয়নি।
তারা মূলত ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার জিরানিয়া মহকুমার বেলবাড়ী ব্লকের অন্তর্গত চম্পাবাড়ী এ ডি সি ভিলেজের করবংপাড়ায় বসবাস করেন। আগরতলা শহর থেকে মাত্র ৩৯কিমি দূরে যুগ যুগ ধরে বসবাস করলেও তারা রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জাতিদের মধ্যে অন্যতম। তারা কৃষি কাজ করে জীবন-যাপন করেন।
তারা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের রীতি-নীতির মধ্যে অন্যতম হলো তারা নিজের মধ্যে বিয়ে করে থাকেন। অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সামাজিক রীতিতে বিয়ে হয় না বললে চলে। তবে এখন করবং মেয়েদের যেমন অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেদের সঙ্গে তেমনি করবং ছেলেরাও অন্য সম্প্রাদয়ের মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে হয়।
করবং পাড়ার এক বৃদ্ধা বাংলানিউজকে জানান, তাদের মধ্যে জন্মের হার কতো কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেন না। কিন্তু জন্মের হার কমেছে।
আগরতলার এতো কাছে হওয়া স্বত্বেও করবং জাতির মধ্যে যেমন উন্নয়নের ছুয়া লাগেনি, তেমনি শিক্ষার আলোও পৌছায়নি। ২০১৭ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম দুই জন ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিক পাস করেছে। এর আগে কেউ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারেনি। করবং পাড়ায় যাওয়ার জন্য নেই কোনো পাকা সড়ক।
হারিয়ে যেতে বসা এ উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষার্থে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেড (ওএনজিসি) এগিয়ে এসেছে। তারা ২০১২ সাল থেকে করবং উপ জাতির জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও জীবিকা রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার জন্য তাদের পাড়ায় একটি কমিউনিটি হল তৈরি করে দিয়েছে।
এ জনগোষ্ঠীর উন্নতির জন্য ওএনজিসি ইতোমধ্যে গরুর, শুকরের, হাঁস-মুরগির খামার, মাছ চাষের জন্য ফিসারি, কৃষি কাজের জন্য জমি তৈরি ও সেচের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্মতভাবে জীবন যাপনের জন্য পাড়ায় বিদ্যুৎতায়ন, কমিউনিটি হল, বাজার সেড, একাধিক পাকা শৌচালয় করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। সেই সঙ্গে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার জন্যপাঠ্য পুস্তক ও বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ও এনজিসি'র ডিরেক্টর ভিপি মাহাবুর।
ওএনজিসি গত তিন বছর ধরে এ পাড়ার জন্য কাজ করে আসছে বলেও জানান ভিপি মাহাবুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এসসিএন/ওএইচ/