সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজ্যে জনসংখ্যা ২৭ লাখের সামান্য বেশি। কিন্তু জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রতিবছর রাজ্যে গড়ে ২৫০ জন করে নতুন করে ক্যান্সার রোগী বেড়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে রাজ্যে মোট নথিভুক্ত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮১৪। বছরে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি, এর মানে হচ্ছে ১৪ বছরে এই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
আগরতলার আঞ্চলিক ক্যান্সার হাসপাতালের সুপারেন্টেন্ড ডা. গৌতম মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, ক্যান্সার ছোঁয়াছে রোগ নয়, একজনের শরীর থেকে অন্য লোকের শরীরে তা সংক্রমিত হয় না। মূলত মানুষের কিছু বদভ্যাস জীবন-যাপন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী।
‘ধূমপান, তামাকজাত পণ্য ও মাদক দ্রব্য সেবন অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন, শারীরিক পরিশ্রম না করা। এগুলোর কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে। মূলত মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ক্যান্সার রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার। শতকরা ২০ শতাংশ মানুষ মুখগহ্বরের ক্যান্সারের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসেন,’ যোগ করেন তিনি।
ডা. গৌতম মজুমদার বলেন, মদ্যপান, তামাক সেবন ও অত্যাধিক শুঁটকি খাওয়ার জন্য অনেক সময় এ ক্যান্সার হয়ে থাকে।
ক্যান্সার রোধের জন্য ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৭৫ সালে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সরকারের ক্যান্সার প্রতিরোধ পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৮০ সালে আগরতলার ক্যান্সার হাসপাতালটি স্থাপিত হয়।
এই হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক ক্যামোথেরাপি ও রেডিও থেরাপির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাফল্যের হার প্রায় ৯০ শতাংশ।
তিনি বলেন, সরকার বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। এই হাসপাতালের পরিষেবাকে উন্নত করার লক্ষ্যে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার সম্প্রতি ১২০ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে।
‘পাশাপাশি হাসপাতালের অত্যাধুনিক পাকা ভবন তৈরির জন্য ত্রিপুরা রাজ্য সরকার আরো ৬০ কোটি রুপি মঞ্জুর করেছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা বর্তমান হাসপাতালের পাশে আরও দুটি বিশাল আকারের দালান তৈরির কাজ শুরু করেছে। সব মিলিয়ে এই ব্যাধি প্রতিহত করার জন্য ত্রিপুরা রাজ্যে সুবিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ’
ডা. গৌতম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করতে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে।
‘ক্যান্সার রোগীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ক্যান্সার হাসপাতালে অমৃত ফার্মেসি চালু করেছে, এমন একটি ফার্মেসি রয়েছে আগরতলাতেও। ’
ওই ফার্মেসির কর্মীরা জানান, ফার্মেসি থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে গেলেও রোগীদের ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ দেওয়া হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরাও জানিয়েছেন, চিকিৎসা পরিষেবার মান খুব ভালো। তারা এই পরিষেবায় বেশ সন্তুষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮
এসসিএন/এমএ