ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বড়মুড়ায় বহুমুখী বাঁধ ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
বড়মুড়ায় বহুমুখী বাঁধ ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক ত্রিপুরায় জনজাতি ভিত্তিক দল তিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টির বিক্ষোভ। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই জেলার বড়মুড়া পাহাড়ে হাওড়া নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করে বহুমুখী প্রকল্প রূপায়নের যে পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার তার তীব্র বিরোধীতা করছে জনজাতি ভিত্তিক দল তিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টি।

ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি-আইপিএফটি সরকার ক্ষমতায় বসার এক মাসের মধ্যে ২ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব খোয়াই জেলার বড়মুড়া পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় হাওড়া নদীর উৎস স্থল পরিদর্শন করেন।

পরে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আগরতলা শহরে যে পানিবন্দির সমস্যা হয়, তার স্থায়ী সমাধান করার জন্য হাওড়া নদীর উৎস স্থলে আড়াই মিটার উচু বাঁধ নির্মাণ করে তার সমাধানসহ বহুমুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাঁধের পানি থেকে প্রায় দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এ পানি আবার খুব সামান্য খরচে পরিশ্রুত করে পশ্চিম জেলার চম্পকনগর এলাকা থেকে শুরু করে সমগ্র আগরতলা শহর এবং সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় এলাকা পর্যন্ত খাবার পানি হিসেবে সরবরাহ সম্ভব।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আগরতলা শহরে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তোলে সরবরাহ করা হচ্ছে, তাতে আয়রনের মাত্রা অনেক বেশি। ভূগর্ভস্থের পানিকে আয়রনমুক্ত করতে একটি প্ল্যান্টে প্রতিমাসে খরচ হয় ৫ লাখ রুপি। কিন্ত হাওড়া পানি হবে আয়রনমুক্ত। অতি অল্প খরচে এ পানিকে পরিশ্রুত করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব। এছাড়া এ বাঁধকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র। আগরতলা থেকে পর্যটকরা নৌকায় করে সেখানে যেতে পারবেন। বর্ষার সময় বেশি পানি আর শুক্ন মৌসুমে নদী পানি শূন্য হবে না। এ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি রুপির বেশি।

তিনি বলেন, আঠারোমুড়া পাহাড়ে বসবাসকারী জনজাতি অংশের মানুষও পর্যটকদের সঙ্গে ব্যবসা করে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। বাঁধ নির্মাণের ফলে যে জলাধার তৈরি হবে তাতে মাছ চাষ করা যাবে। কৃষি কাজেও এ পানি ব্যবহার হবে।

কিন্তু গত কিছুদিন ধরে রাজ্য সরকারের এ বহুমুখী প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করছে জনজাতি ভিত্তিক দল তিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টি। তারা এর বিরোধীতা করে একাধিকবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

সোমবার (২০ আগস্ট) দলের সভাপতি সি আর দেববর্মার সঙ্গে এ বিষয়ে আগরতলার কৃষ্ণনগর তার বাড়িতে কথা হয়। এ বহুমূখী প্রকল্পের বিরোধিতা তারা করছেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নামে জনজাতি অংশের মানুষদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত মানুষদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তারা কিছুই পাননি। উদাহরণ হিসেবে তিনি গোমতী জেলার ডুম্বুর পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, দক্ষিণ জেলার তৃষ্ণা অভয়রণ স্থাপনের সময় যেসব জনজাতি অংশের মানুষের উচ্ছেদ করা হয়েছিল তাদের কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার যদি এ প্রকল্প থেকে সরে না আসে তবে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন।

এ প্রতিবাদের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে এদিন মহাকরণে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, জনগণ তাদের ভোট দিয়ে কাজ করার জন্য পাঠিয়েছেন। তাই তারা জনগণের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন। এখানে অন্য মানুষের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবেন না। যদি এরপরও উন্নয়নমূলক কাজে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তবে কঠোরভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে।

তিনি বলেন, যারা প্রতিবাদ করছে তাদের হয়তো ধারণাই নেই কতো বড় উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার।

এ প্রকল্পের বাস্তব পরিণতি কি হয় তা দেখার জন্য রাজ্যবাসীকে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
এসসিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।