নিত্যদিনের ব্যবহারের উপকরণের একটা অংশ একসময় আবর্জনায় পরিণত হওয়ায়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা।
ভারতে আবর্জনা নিয়ে গবেষণা ও তা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা ও পুনঃব্যববহারের জন্যে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ‘আই গট গার্বেজ’।
প্রতিষ্ঠানটির জরিপ অনুযায়ী, প্রতিদিন শুধুমাত্র ভারতেই ১৫৭ মিলিয়ন কেজি আবর্জনা সৃষ্টি হয়, এর সিংহভাগই প্লাস্টিক বর্জ্য। বিভিন্ন শহর থেকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলোর খুব কম পরিমাণ অংশই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুনঃব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। মোট উৎপাদিত বর্জের প্রায় ৮০ শতাংশই ভাগাড়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায়, তা নদী-নালা ও খালে গিয়ে জমা হয়। অনেক সময় বর্জ্যের স্তুপ কমাতে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে তৈরি হয় স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিরোধী বিষাক্ত গ্যাস। আবার এই প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটে। ফলে বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় পানিবন্দি পরিবেশ। পাশাপাশি মশা-মাছির বংশ বৃদ্ধির জন্যও দায়ী এই প্লাস্টিক আবর্জনা।
মানুষের নিত্যদিনের কাজ কর্মের সঙ্গী এই প্লাস্টিক। ঘুম থেকে উঠে আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, আমরা কত কাজে যে প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার করি তা গুনে শেষ করা কষ্টকর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব দ্রুতই এর ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে, গোটা বিশ্বই একদিন প্লাস্টিকের আবর্জনা স্তুপে পরিণত হবে।
অন্যদিকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রীকে আধুনিক আঙ্গিকে তুলে ধরে, প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী গড়ার অভিযানে সামান্য হলেও দিশা দেখাতে শুরু করেছে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা। বাঁশ, বেত, ফুল ও ঝাড়ুসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- সেভিং ব্রাশ, চিরুনি, হেঙ্গার, ট্রে, ফল-ফুল, কলমদানি, বাঁশের কাপ, ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়ার স্ট্র, চামচ, হাতপাখা, চেয়ার, টুল, আলনা, পালঙ্কসহ নারীদের সাজ সজ্জার সামগ্রীও।
এসব সামগ্রী তৈরির জন্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকারের পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘ফরেস্ট রিসার্চ ফর লাইভলিহুড এক্সেটেনশন’ এর আগরতলা শাখা অফিস। আগরতলার পার্শ্ববর্তী হাতিপাড়া এলাকায় এই অফিস অবস্থিত।
অফিসটির পরিচালক পবন কুমার কৌশিক বাংলানিউজকে জানান, তাদের এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত দুই ধরনের কাজ করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে প্লাস্টিকের বিকল্প সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ। বছরের বিভিন্ন সময় এসব সামগ্রী তৈরির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্য থেকেও মানুষ এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এখান থেকে প্রশিক্ষণের পর নিজেরাই বাড়িতে গিয়ে এসব পণ্য তৈরি করে বিক্রিও করছে তারা।
তিনি জানান, রাজ্যে এসব সামগ্রীর চাহিদা কমলেও, ভারতের বিভিন্ন শহরে এসব পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলোর চাহিদা বাড়চ্ছে। বর্তমানে বড় বড় স্টার হোটেলগুলোতেও ব্যবহৃত হচ্ছে এসব পণ্য। রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।
প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে-পরিবেশের ক্ষতি না করে, বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহের জন্যে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বনজ সম্পদ আহরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রশিক্ষণে বাঁশ চাষ ও জৈব সার তৈরি করে, এ সার দিয়ে চাষবাদের বিষয় শেখানো হয়।
তিনি আরও জানান, আগামীদিনে এসব পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে ও রাজ্য থেকে এ পণ্যের উৎপাদন বাড়বে। যা মানুষকে প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা কাটিয়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া পার্থ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, শুধু প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবেই নয়, ঘরের চালার ঢেউটিনের বিকল্প হিসেবেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ।
তিনি বলেন, রাজ্যের রেলস্টেশনগুলোতে এখন বাঁশের ঢেউশিট লাগানো হয়েছে। এ শিটের বাঁশগুলো তিনিই বর্হিঃরাজ্যের একটি সংস্থাকে রফতানি করে ছিলেন। পরে তারা ঢেউশিট তৈরি করে রেলের নির্মাণকারী ঠিকাদারী সংস্থার কাছে বিক্রি করেছে। তিনি বাঁশের তৈরি সামগ্রী চীনেও রফতানি করে থাকেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এসসিএন/এসএ